30 January 2016

দীপংকর চন্দ



হ্যালো তুমি কি আসছো আজ বিকেলে
একেবারে অর্থহীন অপ্রয়োজনীয় কথাগুলো পুনরুক্ত হচ্ছে বছরের পর বছর গ্রামোফোনের একঘেয়েমি এবং কবেকার সেই
ফাউন্টেইন পেন কি যেন নাম ও হ্যাঁ পার্কার কালি ফুরিয়েছে অথচ মায়া মায়া করে শেষ হচ্ছে জীবন কোন মানে হয় এসবের হ্যালো
তুমি কি আসছো আজ বিকেলে

শীত কিন্তু জেঁকে বসেছে বেশ এবং এটাই অদ্ভুত আমি এখনও বেঁচেবর্তে আছি খাচ্ছি দাচ্ছি দিব্যি এবং ঘুমিয়ে কাটাচ্ছি সেই আশ্চর্য
সময় যা কিনা একবার চলে গেলে ফেরে না আর হ্যালো
আমাদের গাড়িবারান্দার পশ্চিমে শিউলি গাছটার কথা মনে আছে অবাক ব্যাপার বৈশ্বায়নেও বদলায়নি তেমন আর মরিস মাইনর

আদ্যিকালের বদ্যি বুড়োর মতো দম ফুরিয়ে অতীতের আস্তাকুঁড়ে এখন হ্যালো শুনছো তুমি কি আসছো আজ বিকেলে হ্যালো

01 January 2016

নৈরিৎ ইমু




বিরল সারথী
অন্তহীন ঘোর হতে আনি তুলে হিরণ্যদেহ
স্থূল অন্তরে, মনে হয় কুমুদবান্ধব- আরোপিত মুখ
সংশ্রব- অনঙ্গ ফেনারাশি, অপূর্ণ ওঁকারে ধীরে ধীরে
লীন করি ধূপিত জগ
নরকের ভৃত্য কে জানে কখন এসে কারে
করেছে দান- অপাত্রে, অকৃত্রিম রাশি যার বৃষ

ক্ষয়িঞ্চু স্পর্শ পাশে কাটে রক্তবর্ণ দিন
সবিশেষ ঘূর্ণিকায় ক্রমশ ধৃতিহারা ক্রোধ
তবুও তরানোর মোহ- হরি স্বস্তি বন
নিজেরই প্রোথিত ক্ষীণ অনলের তরু, হাওয়া গান

ধাবমান পরভৃতে ছুঁড়ে পুরুষ বাণ
এই পর্যায়ে ধরাশায়ী নিজের ব্রহ্মা প্রাণ
সর্বক্ষণ ভীতু থাকে চন্দ্রাতপ পিপীলিকায়।





ঘুম ও ঘাতক
১.
তমশার কাছে গিয়ে ধরা দাও
অনন্ত পাথারে— বালিঘড়ি মেপে
নেমে পড়ো শ্মশানের কাছাকাছি
কোথাও ডালিম বনে, তমোহরে—
যেনো গালিবের সুরাঘন ঘুমে
হেসে ওঠে ছায়া, চাঁদ সদাগর।
উলঙ্গ রাম-দা হাতে তাড়া করে
সেকি যমদূত, নাকি পূর্ব জনম?
তার কাছ থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরো
এই পলায়ন দৃশ্য স্থির চিত্র
না-পেরোয় একচুল, তবুও দৌঁড়
বেগহীন সুপ্রাচীন পা যুগল
বোবা ও বধির— রক্ষাকর্তাহীন
আর কপালের ঘাম, রাশি রাশি
সাদা সাদা তুলো— ধেয়ে আসে ক্রমে
উলঙ্গ রাম-দা হাতে জল্লাদ এক।


২.
আমিও ঘুমাই ঘাতকের পাশে গিয়ে
পাথুরে দেয়াল আমাদের ঘুম দেখে
কঙ্কালে জড়ায় আরো কিছু মাংস মতো;
আরো কিছু লাল এসে ভরে যায় হৃদ
ঘাতক চিনে-কী শ্বেতকরবীর কাল?
ছায়া-রোদ, সমবেত নতজানু গাছ—
গাছেদের ফাঁকে ফাঁকে আঁশটে গন্ধের
যে-শরীর ঘুরে ফিরে, কারুকৃতি তার?
কেবল ঘুমের দৃশ্যে আমি ও ঘাতক

অভিজ্ঞ আরেক ঘাতকের কাছে যাই।

মুনিরা চৌধুরী





১.
পুরনো বইয়ের পাতা উল্টে চোখে পড়লো
মমি হয়ে আছে কয়েকটা মাছি ও অচিন বৃক্ষের পাতা...
মমি হয়ে আছে পাতার স্পন্দন আর মাছির উড়াল

সাঁতার কাটি
নয়'শ বছরের পুরনো সমুদ্রে একা...

এ-কোন বিস্মৃতির জল কেবল ফেটে ফেটে যায়
এ-কোন কাহিনী গাঁথা- শবযাত্রী, সানাই আর ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ

স্বর্গের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে
চুম্বন শেষে কেন তারা ঠোঁটগুলো ছুঁড়ে দিলো নরকের দিকে!

দু'চোখ ঝাপসা হয়ে আসে
দু'চোখে জন্ম নেয় অজস্র রক্তের ডালপালা...

মেহেকানন্দা নদীতীরে অহ ঈশ্বর
কোনো এক কুয়াশাভোরে তুমি কি রক্তডুমুরের ডালগুলো কেটে দেবে!


২.
কে যেন রাস্তার পাশে মলিন চাঁদটাকে রেখে গেছে
চাঁদের গায়ে হোচট খেলাম
শুধু পা নয়, সমস্থ "আমি" ভেঙ্গে গেলে চাঁদের শরীর থেকে চাঁদনী ও আগুন বের হয়...
জন্ম হয় দাউ দাউ চিতার...
মহাআনন্দে পুড়তে থাকি পৃথিবীর প্রথম মানুষ

ওহে শ্রীমতি. ঠাকুর মা আমার
আমিও চিতা জ্বালানোর কৌশল শিখে গেছি।


৩.
আয়না হতে পিছলে পড়েছে মুখগুলো
আজ তোমার মুখের গভীরে দেখি ভেঙ্গে-যাওয়া সেই আয়নার দাগ।

বিবর্ণ থৈ থৈ
বিধবার শাদা থানের মতো চারদিক...
হে দিন, হে রাত্রি, হে বসন্ত, হেমন্ত মৌসুম
হে প্রজাপতির ডানা, পাখির পালক, হে বৃন্দাবনের সিঁদুর
কোথাও কোনো রঙ নেই
আমাদের মেহদীবাগান কালো কুয়াশার নীচে ঢাকা পড়ে আছে
শুনেছি পাথরে মেহদীপাতা ঘষলে রঙের হলাহল বের হয়ে আসে
আমি আজ হৃপিণ্ডকে পাথর বানিয়ে নিয়েছি।


৪.
আজ এই শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ ফেটে গিয়ে
নীল-বর্ণ আলো ঝরছে
নরক প্রদেশে।

নরকের নয় দরজা খুলে বসে আছি আমি আর একটা অন্ধ হরিণী...

দু'চোখ ছিদ্র করে
গলিত চোখের রঙে চন্দ্রের পিঠে এঁকে দিয়েছি গাছের ছবি
এই গাছ স্বর্গের গাছ
এক একটা শিশু মৃত্যুর পর সেই গাছে একটা করে ফুল ফোটে

ওহ ইশ্বর
সময় হলে কি তুমি দেখে যাবে
সেই গাছে অনেক অনেক ফুল ফুটেছে

তুমি কি একবারও শুঁকে যাবে না হাস্নাহেনা অথবা মুনিরাহেনার গন্ধ!



৫.
চাঁদের শরীর থেকে বের হচ্ছে ধূয়া ও শিশির
দুই হাজার বছর আগেকার রাত ছাই হবে দুই হাজার পনেরো সালে

দু'চোখের অন্ধ ছায়া উড়ে যাচ্ছে অন্ধকারে
পাখিরা নৌকা চালায় বাতাসের নদে

নিঃশ্বাস ফেটে যাচ্ছে ধীরে গাছের, মানুষের
ফাটা-নিঃশ্বাসে তুমি কি একবারও আত্মহত্যা করতে আসবে না!


৬.
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ছিপছিপে এক মাতামুহুরী নদী
নদী পেরিয়ে যাচ্ছে সময়
হাতের নীলবর্ণ রেখায় এ-কার ছায়া দেখা যায়!

ছাদের উপর বৃষ্টির গুঞ্জণ থামছে না কিছুতেই
তানপুরার হৃপিণ্ডে আঙুল ফেটে গেলে বুজতে পারি না
এ-কান্না উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে নাকি মাতামুহুরীর

ঘরের জানালা কিছুতেই বন্ধ হয় না
আমাদের জানালায় আটকে রয়েছে নদীর দরজা।

নাজনীন খলিল





প্রতিটি উড়ালের আগে পাখিকেও শিখতে হয় আকাশের ভাষা
শিল্পিত আঁচড়ের টানে
আঁকা হোক বা না হোক নাম
কি আসে যায়?
আকাশে কেউ লিখে হা-হুতাশ,
জলের গোপনে হাত রেখে
কেউ খোঁজে পাথরের নুড়ি।
স্মৃতি থেকে তুলে আনছি কেবলই খড়কুটো;
যদি বাসা বোনা যেতো কোন
পাখির আদলে!

বালি-পাথরের হৃপিন্ডে রক্তক্ষরণ হচ্ছে,
লুনাটিক হয় কেন কল্পবিলাসী মানুষ?

সুস্মিতা বসু সিং





























সবটুকুই তো তোমার কিছুই রাখিনি বাকি
মাঝে মাঝে নিজেকেই ফাঁকি দিই আজও...
যা পেলাম, একবার মিলিয়ে নিতে ইচ্ছে করে।
পাওনা ছিল কিনা-
সেটাও তো জানা দরকার দয়ার দানে বড় ভয়
করুণা কোরোনা কখনও আমায়, যোগ্যতা থাকে যদি বিন্দুমাত্র দিও সমানুপাতিক
অপ্রাসঙ্গিক মনে হোল বুঝি! জাফরিকাটা নকসা দেখে
গভীর জলোচ্ছ্বাস-প্রাসঙ্গিক নয় কি?
সবুজ পাহাড়ের ঠিক নীচটায় চারণ ভূমিতে
শুধু গাভী নয়-
গর্ভিনী মনও আতঙ্কে মরে তোমার শিখীচূড়ার নীল
আভাস বিষে বিষে গাঢ় অপরাজিতা রঙ
কাঠঠোকরার ঠকঠক ঠকঠক, বকবক বকবক
ক্লান্তিতে দু’চোখ বুজে আসে
বর্ষার মেঘ একটুকরো পাঠিয়ে দিয়ো তো বহুতলের কার্নিশেবারান্দা-বাগানে বিরহিণী রাধিকা
এসো, এসো পুরুষোত্তম একটু স্কচ আর চিকেন
পপকর্ন রাত্রি এখনও যুবতী, তবুও আমাকে এবার যেতেই হবে।
না না–সবুজ অন্ধকার নয় ছাতিমের মাতাল গন্ধ
আর শান্তিনিকেতনের রাস্তায় পড়ে থাকা পাকা তাল...
সঙ্গে যদি আসতে চাও কোপাই-এর শুকনো খাদে পাশাপাশি শুয়ে থাকি চলো
জল এলে যাব না হয় ভেসেই...ততক্ষণ শুধুই অপেক্ষা অপেক্ষা অপেক্ষা

দুখাই রাজ



সংসার ও পিতৃপাঠ
তারপর থেকে
রাতের পর দিন কেউ দ্যাখেনি সংসারের
এখানে আর সংসার ঘুমায়না
ঘুমায় কিছু যাজক ঘুঘু
এখন
যেখানে বিকলাঙ্গ পিতা ঘুমান, নিশ্চিন্ত;
সে বিছানার তলায় কেঁচো খুড়ছে মাটি
দু'মুঠো সংসার তার
মুঠোফুড়ে ছুটে গ্যাছে

আমরা ঘুমাই
আমাদের সংসার ঘুমায়। যাজক ঘুঘু ঘুমায়

পাথরে বেঁধে রাখা আমাদের সংসার
আর লেপ্টে থাকা- পিতার মানসিক বৈকল্যের হাত





ঢিলটি মারলে পাটকেল
আসুন আপনাকে ভালোবাসি
বসুন আপনাকে চুমু খাই
চলুন অন্ধকারে
আলনায় তুলে রাখুন পোষাক
ছুঁয়ে দেখুন অন্ধ রাত
এখানে কারো কোন চোখ নেই

আপনাকে বলেছিলো-
আপনার স্ত্রীর বান্ধুবি।


'এসো। শুতে এসো'
আপনার স্ত্রী আমাকে ডাকছে
সরি, দাদা। আজ ফোনটা রাখছি।

রিক্তা চক্রবর্তী





স্বীকারোক্তি
রক্তক্লান্ত এ উদ্ধত সভ্যতায় অনন্তকাল মরা আর বাঁচা প্রতিবার পূজোয় বাড়ী ফেরার সময় জীবনের প্রতি এক অমোঘ টান অনুভব করি
সাময়িক অনভ্যস্ততায় অবচেতন জুড়ে নাগরিক সভ্যতার সাইড এফেক্ট খেলা করে
রক্ত আর গ্রেনেড কে সঙ্গী করে লিখতে বসি,
আরও এক অবচেতনে মোড়া কবিতা


ঘুম

জ্বলন্ত এই বাস্তব থেকে রেহাই চাই জানো কি, ঘুমটা কোথায় পাওয়া যায়? রাতের পর এই নিদ্রাহীন রাত ঘুমের ঠিকানাটা জানা আছে কি কারোর? পালাতে চাইছি নির্ঘুমের এই কারাগার থেকে আচ্ছা, ঘুমটা এখনও আসে না কেন? আমাকে যে ছিঁড়ে ফেলবে দয়াহীন জাগরণ তোমরা কেউ তো ঘুমকে বলো, আমায় নিয়ে যেতে পেঁজা তুলোর মত সাদা নরম বিছানায় মেঘ মেঘ শান্ত ভেজা ঘুম, কিছু আরামপ্রিয় স্বপ্ন স্বপ্নের রঙটা যেন হয় উজ্জ্বল সবুজ কালোটা আমি আকাশেই রেখে যেতে চাই প্রেম নয়,নাম হয়,যশ নয়, আজ শুধু ঘুম চাই কুয়াশামাখা আচ্ছন্নতায় সে ঠোঁট ছোঁয়াক কপালে তার সাথে গল্প করতেই আমি চলে যেতে চাই নিশ্চিন্তিনগরে, দুঃস্বপ্নরা কারাগারে বন্দী যেখানে ছোট্টবেলার ঘুমপরীর হাত পৌঁছায় না আর কপালে ঘুমপাড়ানি গানগুলো আজ সুরতাল সব ভুলেছে নিদ্রাও আজ ভুলেছে আমায়, একলা এই ধূসর পথে বিশ্রামের একটু ঘুম চাই, কেউ যদি এনে দিতে পারে রূপকথার সেই মরণকাঠির ছোঁয়াটা কোথায় পাবো, বলতে পারো? আজকে তুমি যদি না আসো কষ্ট গুনতে পাগল আমি পথে নেমে চিকার করব ঘুম, বলোতো অনন্ত এত অল্প কেন?

জয়তী অধিকারী




যে চারজন একদিন তাড়া করেছিল সদ্য কলেজে পা রাখা মেয়েটিকে,
তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল গঙ্গার ধারে,
জ্যোস্না আর কাদায় মাখামাখি মেয়েটার ওড়না ছিঁড়েই হয়ত মুছে নিয়েছিল দৃপ্ত পৌরুষ!
একের পর এক জ্বলন্ত কাঠের ছোঁয়ায় একটু একটু করে পুড়েছিল মেয়েটা।
 নদীর জল তার যন্ত্রণা প্রশমিত করতে পারেনি,
নদীর পাড়ের গাছেরাও স্থাণু চেয়ে থেকেছে অসহায়, আকাশ তার চাদর হতে পারেনি,
শুধু একটি মুনিয়া পাখি ঠোঁটে করে একটা সবুজ পাতা এনে ঢেকে দিয়ে গেছে ভবিষ্য জননীর গোপন অঙ্গ।
বিচারকের হাতে থাক কলম, আইন বেঁচে থাক তার ফাঁক নিয়ে।
নির্যাতিতার যোনি কি আইনের ফাঁকের চেয়েও সেলাই-অযোগ্য?

আবিষ্কার হোক সেই সেলাই মেশিন যা ছিন্ন ভিন্ন যোনিকেও রিফু করে ফিরিয়ে দিতে পারবে পূর্বাবস্থায়!

ফারহানা সুমি




বড় আশা করে এসেছি এই বেলা ঠোঁটে নিয়ে সখা,
করেছি বিয়োগ দখিনা চোখের বৈঠা উঠোন।
ভুলেছি মুখস্থ ফুলের ঘ্রাণে জমাট বাঁধা কত কথা...
যা বেঁধেছিল পথচারী শত ঠোঁটের দল ছবিরা।
পেতেছি পিঠ কত যুবকের ঘরদোরে বুকে নিতে তোমার
শুভ্র খোলা মাঠ বড় আশা করে সখা,
এসেছি দ্বারে দিতে অধিকারের স্বপ্ন ঝিনুক বিছিয়ে দেখো নিঝুম অবসর আমার হাতে তোমার হাত
তোমার নামে আমার নিঃশ্বাসের তৃণলতা
বেড়ে উঠুক মূহুর্তের জমা কবিতায় তোমার চোখে আমার চোখের বাহানা।
অন্যসব ধূলো হয়ে পড়ে থাক পেছনে ফেলা ছেঁড়া কাগজের মত সখা ভেবো না নিন্দুকেরা কিছু বললো কিনা,ভেবো না অভিশাপের মন্ত্র যপে ফুলের বিছানায় বিষণ্নতা আঁকল কিনা প্রজাপতিরা। পারলে চেয়ে নিও ক্ষমা যে ঠোঁট থেকে নিয়েছো সুখের বিলাসীতা।

যে চোখ থেকে ধার করেছো সরল বিকেলের কথা।
রাতদুপুরে যার কণ্ঠস্বরে দখল নিয়ে শুনতে চেয়েছো জয়ত্রী শুধু একবার...
বুকে হাত রেখে-
কমল তুলি মেখে নিঃশ্বাসে...আরো একটু কাছে এসে কানের গুহায়,ঠোঁট রেখে বলো...
হেমন্তের মায়াময় নিঝুম পত্র ছুঁয়ে যে বলেছিল - ভীষণ ভালোবাসি আমার ডুমুরের ডুবডুবি।
শুয়ে থাকা স্বপ্নের হলুদ চঞ্চলতাও সাক্ষী ছিল আবিষ্কার করেছো তার নিঃশ্বাসের বসত ভিটে।
চুলের ঘ্রাণে শুঁকেছো বর্ষাকাল,
কালোর খেলায় মেতেছো চোখের চঞ্চু ভরে মেঘ গুজনে আর তনুশ্রীর...
যদি ভুলে থাকো সখা তার দেয়া শর অবেলার-শত স্বাধীনতা.....উড়িয়েছো যা ঝরাপাতার বুক পকেট ভরে...
তবে ক্ষমা চেয়ে ফিরে এসো শেষ নমস্কারে, তারপর ডাকনাম.... উপহার দেবো তোমায়
নেবো বিশ্বাসের দখল বড় আশা করে...

স্বাক্ষর চন্দ




























আমার লাল নীল স্বপ্নেরা ফাগুন ছুঁয়ে যায়
রোদ্দুরের অস্তাচল, ভাবনা গিলে খায়।
আমি দিগন্ত
বৃত্তে দেখি রাতের আনাগোনা
আমার স্বপ্নেরা পুকুরে ভাসে,হেলেদুলে কচুরিপানা।
দৃষ্টিপট জুড়া শুধু ভাঙাচোরা কল্পকথা
দিনের মানচিত্রে আঁকা রুদ্ধশ্বাসের ব্যাথা।
আমি যদি শেষ বেলার ডাকপিয়ন হয়ে
হেঁটে হেঁটে যেতে চাই দেশান্তরে!
কেও কি আমাকে আটকাবে না?
আমার বাম হাত ধরে কি কেও বলবে না?
এক মুঠো প্রেম দিয়ে যাও,
আমি থাকবো আরেক মুঠোর অপেক্ষায়?

রিকি দাশ





পদ্মপাতার কানন ধরে মেঘের মিশ্রণ ছুটে আসে শূন্য পৃষ্ঠায়। ফুটে উঠে এক একটা বিস্ময় ম্যুরাল। কখনো ঘন জলরঙা, কখনো রঙের টেরাকোটা। আঁটকে থাকি বকুল ফুলে, ভালোবাসি বলে। উঠোনের ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া তোমায় আর গায়ে জড়ানো হয়না। এভাবে পাশের বাড়ির বাগান গুলির নিত্যচর্চা চলে। তা দেখে এখন আমাদের আশেপাশের চার দেয়াল লুকোচুরি খেলে। আমি কনফিউজড, ওরা খেলে নাকি আমরা?

যাক গে! অমনটা একটু আধটু হয়, না হলেই বা হওয়ার মুল্য কোথায়!

এখানে নীলকণ্ঠী পাতা আছে, নিমের তলায় ইচ্ছেমতন ঘ্রাণ নিতে পারো! ঘাসে ঘাসে ঈর্ষনীয় সাইরেন আছে। আধিভৌতিক কুয়াশার কোন গল্প কিন্তু নয়! যদি লুফে নেওয়ার মতন চিবুক থাকে তবে তোমাকে রুখে কে?
এই যে সূর্য মায়ের আঁচল থেকে শিশুসুলভ দুটি চোখ নিয়ে বের হয়, ধীরে ধিরে পরিণত, বার্ধক্য
মায়ের আঁচলে যে জন্মায় নিত্যদিন। ওভাবে প্রেম জন্মায়। এখানের বাতাসে উপর্যুপরি স্নেহ আছে, আষাঢ়ের স্রোতে প্রেমাতাল আলো আছে, রাতের মোড়ে মোড়ে লোডশেডিং নেয়। মগজে আছে মাছরাঙার স্রোত,মা-নু-ষ!

এখানে আছে অসংখ্য তাঁরা, আমি কখনো তাঁরা গুনে দেখিনিকেবল মুগ্ধতার প্রলেপ ছিল কর্নিয়ায়। এখানে অপরাজিতা হাসে গোধূলির ঠোঁটে। মাঝির নদীপথে। কৈশোর শ্রাবণে উড়ে যায় হাতে হাত ধরে এক গুচ্ছ নীল আড্ডার প্রজাপতি


জলপ্রপাতের মতন মানবিক প্রেম, অহর্নিশি আকর্ষণ। এই আন্দোলনে তিলে তিলে ক্ষয়ে যাক সব শব্দসংঘ। ডুমুর বাজুক,সব সুত্র ভুলে ধীরে ধীরে লুপ্ত হোক আমি

রিয়া চক্রবর্তী





বিকেলে জানলার ফ্রেমে চোখ রেখে ইলেকট্রিকের তার গুলোকে দেখছিলাম। সুখে, দুঃখে, সারাক্ষণ একে অপরকে ছুঁয়ে আছে। একে অপরের হাত ধরে চলে গেছে বহুদূর। এ যেন এক অদ্ভুত প্রেম। একে অপরের সাথে সহমরণে যাবার অঙ্গীকার বদ্ধ। চোখ গেলো একটি কাক সংসারের দিকে পাশের বাড়ীর গাছে বাসা ওদের। মা কাক, বাবা কাক আর ওদের আদরের ছোট্ট কাক ছানা। ছোটো সংসার সুখী সংসার।
এদিকে বিকেল ভেঙ্গে সন্ধ্যে নেমে আসছে, প্রবাহিত মেঘেরা রং বদলাচ্ছে। হাওয়াদের সাথে খুনসুটি করে সেরে নিচ্ছে প্রীতি বিনিময়।

ঘর ছেড়ে যেসব পাখিরা খাবারের সন্ধানে চলে গিয়েছিল বহুদূর, তারা তাদের ডানায় গোধূলির রং নিয়ে ঘরে ফিরছে প্রিয়তমাকে রাঙিয়ে দেবে বলে। আর আমি এইসব দেখতে দেখতে হারিয়ে যাচ্ছিলাম সেই গোল্লাছুটের মাঠে। ফড়িং, জোনাকিদের সাথে খেলা করার দিনগুলোতে। অতীত মগ্ন হচ্ছিলাম আমি। মনে পড়ছিল সন্ধ্যে বেলায় মায়ের ডাক ঘরে ফেরার জন্য। সবাইকে দিনের শেষে বুঝি ঘরে ফিরতেই হয়? আর যাদের মা ডাকে না তারা কি হারিয়ে যায় গোধূলির ধুলোয়?

দিনের শেষে নিজের ঘরে ফিরতে অনেক আলোকবর্ষ পেরিয়ে গেছে অনায়াসে। মহা শূন্যতার মতো শূন্যতা গ্রাস করে মাঝে মাঝে। নিজের ধ্বনিই প্রতিধ্বনি হয়ে বার বার ফিরে আসে সেই অতীত দিন গুলো থেকে। এখন আর মায়ের ঘরে ফেরার ডাক কানে আসে না।


আকাশে তারাদের আনাগোনা শুরু হয়েছে, একে অপরের কুশল সংবাদ জেনে নিচ্ছে। আজকে আমার ঘরে জ্বেলেছি মিথ্যে মিথ্যে নিয়ন আলো। মনখারাপের ভেলায় চড়ে বেহুলা একাই ভেসে যাচ্ছে মান্দাসে। আমিও আজ ভেসে যাচ্ছি বহু দুরে অনন্ত বিস্তারে, সমস্ত মাধ্যাকর্ষণ ছিন্ন করে।

সেলিম রেজা



স্বপ্ন পিপাসায় অসহ্য সুন্দর একটি চেহারা
অসহ্য সুন্দর তৃষ্ণার্ত একটি চেহারা শুয়ে আছে বিছানায়
খুব ইচ্ছে একবার ছুঁয়ে দেয় বাঁ কিংবা ডান হাতে
স্মৃতি জাগানিয়া নৈঃশব্দে করে লুকোচুরি
অদম্য এক তৃষ্ণা গা ভাসায় সমুদ্র শরীরে
ইচ্ছেঘুড়ি ডানা মেলে নীলাকাশের পানে
স্বপ্ন উড়াল দেয় আদিগন্ত সীমানা পেরিয়ে
বয়সের পাথর সরিয়ে হাঁটে বেহিসেবি যুবক
বিস্তৃত পথে গন্তব্য একটাই ভালোবাসার নিকোনো উঠোন
আর এক সমুদ্দুর স্বপ্ন পিপাসায় চুমু খায় পৃথিবীর গালে...




কেউ নেই, কেউ তো আছে
হেঁটে হেঁটে দীর্ঘ পথের সীমানা পেরিয়ে
সারাটা দুপুর কুড়ায় কষ্টের বকুল
কেউ নেই, শোনে না কেউ ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনি
কেউ নেই, কেউ নেয় না টেনে বুকে
কেউ নেই, কেউ হাসে না পরম সুখে
কেউ নেই, কেউ একবার দেয় না ছুঁয়ে
কেউ নেই, কেউ লজ্জায় পড়ে না নুয়ে
কেউ নেই, কেউ দেয় না মুছে কপালের নুনঘাম
কেউ নেই, কেউ জড়ায় না স্বপ্ন সবুজ আঁচলে
বছরের পর বছর গেল, বয়সের ভারে নুব্জ্য
একলা মানুষ চলে না আর;
বাড়ে দীর্ঘশ্বাস বিষ বিষাদে মুখ থুবড়ে পড়ে
শেকড় ছড়িয়ে শিখরে, ঘন সবুজপাড়ার বৃক্ষ
উড়ে এসে বসে পাখি, কথা হয় পাখিদের সাথে
হাওয়ায় দুলে ঘাসফুল মুঠোভর্তি স্বপ্নও
আচমকা কড়া নাড়ে সদর দরজায়
কেউ নেই, হয়তোবা আছে কেউ
কেউ তো আছে বাড়াবে হাত,
কেউ তো আছে
এগিয়ে দেবে নির্ভরতার কাঁধ।

নুরুন্নাহার শিরীন





এক
অজানা, তুমি কি পাখি? 
অচিনপুরের গাঁয়ে আমারে ডেকেছো না কি?
আমি যে ঝিমিয়ে থাকি! 
যখন তখন হাঁদা হৃত  নাম ধরে ডাকি ! 
জানি না কেমন তুমি কোন অজানাতে থাকো... 
আমার ঝিমিয়ে পড়া অস্থিমজ্জা উপেক্ষা করেই ডাকো!
আমি তো দেখি না তুমি মেঘরঙ ডানা মেলে-
কি চিরকুটে কি লিখে রাতভর তারা জ্বেলে-
আমার জানলা তলে ভোরের ঝালরবাতি-
ঠিকঠাক পাঠিয়েছো কি না খুঁজি  আঁতিপাতি! 

দুই
আমার ঘরের পাশে পড়শি অচিন অতি...
শতেক পালক খসে পড়ার সে কোন অভিরতি! 
তবে সে থাকুক তবে তোমারই অজানিত অনুভবে -
আমিই কেবল মরি ভাবের ভিতর মৃত কলরবে!  
এদিকে ডানার গন্ধে প্রাণান্ত ঘুমের দেশে-
রক্তাক্ত এস্রাজ বেজে উঠলেই ঘুম হয়তো ফুরোবে শেষে!
তখন অজানা প্রেম এসে বসবে শিথানে মায়াবী পাখির মতো
যেন সে অসীম গান...পাখির নীড়ের মতো! 
তখন তলিয়ে যেতে গিয়েও  আবার ফেরা... 

জগতবাড়ির মায়া...প্রেমান্ধের আদ্যপান্ত মুগ্ধতায় ঘেরা।

রুদ্র আমিন



পূর্ণিমা নয় আঁধারকে ভালবাসি
পূর্ণিমার চাঁদকে নয় আঁধারকে নিজের করে নিয়েছি
প্রতিটি মুহুর্ত প্রতিটি নিশ্বাস প্রতিটি রক্ত কণিকার রক্ত সঞ্চালন
পূর্ণিমার চাঁদ তুমি তো জানো না আঁধারের মাঝেই প্রদীপ,
পূর্ণিমা তুমি নও, আঁধারকেই আপন করে পেতে চাই,
ক্ষণিকের সঙ্গতা চাইলেই পেতে পারি, ক্ষণিকের ভালবাসা ভালো নয়;
সে তো আপনার আপন নয়, পূর্ণিমা মানে হঠা জেগে ওঠা, আর
দিবার মাঝেও যে আঁধারের বসবাস, সে স্থায়ী, তুমি জানো না;
আঁধারকে আজ নিজের আপন মনে হয়
পূর্ণিমার চাঁদকে নয় আঁধারকেই ভালবেসে ফেলেছি
আঁধারের মাঝেই যে পূর্ণিমার বেঁচে থাকা প্রদীপ।

ফুলহারা, ঘিওর, মানিকগঞ্জ, ০৭ : ৪২, ২৭০৯২০১৫



স্বার্থের লোনাজল
শুকনো নদীর বুক চিরে যদি বান নাই আসে
তবে তাকে কি করে নদী বলি বলো,
বৃক্ষের সবুজ পাতা শুকিয়ে যদি ঝরে নাই পরে
কি করে বুঝবো বসন্ত আসলো বুঝি;

এ হৃদয়ের মধ্যখানে ছোট্ট একটা নদী আছে,
আছে নদীর মাঝে বেড়ে ওঠা একটা বৃক্ষ,
বান আসে পাতা ঝরে আশা বেড়ে বেড়ে একদিন
হিমালয় পাড়ি দিয়ে সাত আসমান স্পর্শ করে ফেলে;

কই, কেউ তো এলো না; উপমার পর উপমার কথা তো সবাই বলে
আজ বুঝে গেছি, সংসার মানে বন্ধন নয় আর
ভালবাসা মানেই বসন্তের স্পর্শ নয়
শুকনো নদী শুকনো পাতা সে শুধু স্বার্থের লোনাজল।

উত্তরা, ঢাকা, রাত: ১২:০০,১২১০২০১৫




বিজ্ঞাপন
বিক্রি হবো, নাম মাত্র মূল্যে
সহজ কিস্তি বা এককালীন পরিশোধ যোগ্য;
বিবরণ বলতে তেমন কিছুই নেই
জং ধরা ইঞ্জিন
৩৩ বসন্ত রোদ বৃষ্টির স্পর্শে
মচমচে পাপর ভাজা।

সিরিজ কাগজের ব্যবহার হয়নি
সেটা মানা করবো না
তবে সেটা মরিচিকা মুঁছতে নয় বরং
নষ্ট বীজ বপণ করতে এসেছিল সবাই;

আজ প্রায় অকেজো
পরিচালকের বয়স হয়েছে বেশ
এখন সে নিজেই নিজেকে চিনতে পারে না
সেখানে উচ্ছিষ্ট ইঞ্জিনের বোঝা বয়ে কি লাভ!

আজ নিলাম ডেকেছে বৃদ্ধ পরিচালক
বিনিময়ে যে ক'টা দিন শ্বাস প্রশ্বাস থাকে
ঠিক ততদিন বৃদ্ধের পরিচালক প্রয়োজন
কিস্তি কিংবা এককালীন।

বাসযাত্রা, হাতিরপুল টু উত্তরা, ১১১০২০১৫, ২:৪০



ভালবাসা কাকে বলে
প্রতিদিন সূর্য দেখি
অনুভব করি সূর্যের ভালবাসা
যেখানে গ্রীষ্মের কোমলতা
মাঘের উত্তাপে চৌচির হয়ে যাওয়া মরুভূমি
সবটুকুই তোমার একান্ত ভালবাসা
আমার অনুভূতি তোমার অনুভবে
একটু স্পর্শ করে দেখো
বুঝবে ভালবাসা কাকে বলে।

অজানা গন্তব্যের মাঝে যখন মুষলধারায় বৃষ্টি ঝরে
অসহ্য যন্ত্রণা তখন কুড়েকুড়ে খায়
এ যন্ত্রণা যন্ত্রণা নয় যখন তোমার স্পর্শ
রক্তের কণিকাকে সহস্র গতিতে ধাবিত করে
সকল ক্লান্তি, যন্ত্রণা মুঁছে দিয়ে এ হৃদয় বলে

দেখো ভালবাসা কাকে বলে।