বিস্রস্ত বেহাগ
এই যে মৃত শঙ্খের ঘ্রাণ—তপ্ত অনুধ্যানের
তলে
মুছে ফেলা নৈঃশব্দ্যের এক স্পন্দন
যেন!
শ্যামাঙ্গী পাড় বেয়ে লোর সন্ন্যাস;
অতঃপর অনিঃশেষ আঙুরক্ষেত—
শিথিল ফেনায় জমে যাওয়া এক সঙ্গিন স্রোত!
প্রতিমুখ পৃষ্ঠার ছায়া জুড়ে বিপন্ন
পাখির বাঁক—
অপটু অরোকেরিয়া থেকে সঘৃত সঙ্কেতে
লেখা সহস্র সংখ্যা চিহ্ন!
এসবই অক্ষীয় বিভ্রমে থেমে যাওয়া নিমগ্ন
ডানার নিশ্চুপতা—
বহতা বাতাসে বিম্বিত বিস্রস্ত বেহাগ!
নকল রৌদ্রছায়া
অনুভবের মারণিক স্বাক্ষরে
নুয়ে পড়ে নিস্তরঙ্গ
প্রশান্তি,
সময় শেষে নিঃশেষ স্পন্দন
আসলে কিছু নকল রৌদ্রছায়া,
ইতিহাসের গভীর ঘূর্ণিতে
কেবল স্ফটিক বিস্ময়,
তবু প্রাণের প্রচুর
ভিতরে জল জ্বলে বারুণী নক্ষত্রের মতো!
অতঃপর ভেঙে যাওয়া নদীর
সূচনায়
বিহ্বলিত বিষয়ীর কলঙ্কিত
কঙ্কাল!
মাটিতে ঘাসের গন্ধ,
ময়ূখের শোক,
আর এপার—ওপার জুড়ে
মৃত আভার মধ্যযুগীয় রঙ!
আমার ছায়ারা
প্রায় ইতি নটে ছায়া আমার সাথে ঘোরে
ঝুলান ঘড়ির জিপসি কাঁটার মতো!
অনেকবার ভাঙতে চেয়েছি ওদের।
তাড়িয়েছি—মেরেছি—কখনোবা ভয়
দেখিয়েছি উলঙ্গ মুখে!
বরাবর ব্যর্থ আমি লুকিয়ে গেছি গাছেদের
আড়ালে।
সময় শেষে নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া কপ্টারের
মতো
ছায়ারা হেসেছে ব্রুটাসের ছুরি হাতে!
আমার ছায়ারা মুখ খোলে না।
কেবল চুপচাপ কপাট বন্ধ করতেই ওরা লাফিয়ে
ওঠে
ঘাসফড়িঙের মতো!
মধ্য দুপুরে ওরা সতর্ক বেড়াল,
কখনোবা ঝুঁটিওয়ালা কালো কবুতর টহলদার
রোদে!
তবু গোধূলি এলেই আমার ছায়ারা গোপনগন্ধরাজ—
রাত্রি এলে আমি নিজেই ছায়া হই ছায়াদের
কাছে!
মৃত্যু
মৃত্যুরে ডেকেছি কাছে
গোধূলির বলয়িত উৎসবে!
দিনান্তের প্রিয়তম ছায়ায়
সব খেলা শেষে নক্ষত্রের
বুকে—
অনন্তের অগাধ শূন্যতায়—
তার অস্ত মুখের মতো
মলিন পথে হেঁটে যাবো দীর্ঘ প্রণাম শেষে পৃথিবীর পায়ে!
সংসারের সত্যে ফেলে
যাওয়া প্রেম, গান,
গোপন মূল্যে কেনা মরণের
ঘুম—
দীর্ঘতম সুন্দর ক্রোড়েরত
বিমূঢ় উঠোন খানি;
মৃত স্বপ্নের ভীড়ে জেগে
থাকা করুণ হাসির পল্লবিত ঠোঁট!
কোনো এক বেহালার রাতে
সপ্তসুরের আশ্চর্য অনুভবে নিঃসংকোচ আলোর সন্ধান—
গুঞ্জরিত বিন্দু বাতাসে
আত্মার উপচার!
রক্ত সিন্ধু থেকে চাঁদের
নাভিমূল-
নড়ে ওঠা সত্যের শঠতা
নিষ্ফল সমুদ্রের বাতাস
ভেঙে আগুনের পথে;
লুপ্ত জলের তৃষ্ণা রাতের
বাহু থেকে ক্রমে ক্রমে খয়েরি চেতনায়!
ইতিহাস মরে কি লোকোত্তর
কালকূটে!
চিরস্থায়ী প্রশ্নের
মতো একান্ত বিশ্বাসে
প্রহেলিকার পৃথিবী থেকে
সান্ত্বনার আকাশ কুসুম—
ছিঁড়ে যাওয়া সময়ের গিঁটে
জন্ম নেয় নতুন উত্তরণ!
প্রাচীন পাণ্ডুলিপির
অন্তরালে যে নিঃসঙ্গতা একাকী হিজলের মতো-
তার মূঢ় পাতায় তিমিরের
ছায়াপথ।
আত্মপ্রসাদ—খুলে যাওয়া
নিষ্ফল পালকের মতো উন্মুক্ত বস্তুপুঞ্জ,
নগরের সেলসিয়াস ক্রন্দসী
মাটির কঙ্কালে;
তবু মানুষ এক গ্রাম!
কংক্রিটে ঘাসের মতো
শুয়ে থাকে কত পাখি,
অন্তহীন সময়ের সুরে
গান ধরে পৃথিবীর প্রথমনদী!
পশ্চিম থেকে পূর্বে
অতৃপ্ত যুবকের মতো কালের দূরবীন নিঃশব্দে চেয়ে দেখে
প্রান্তরে প্রান্তরে
কেবল মুছে যাওয়া হরিণের হাড়,
বিক্ষত বুকের রিক্ততা,নিঃশ্বাস— মুক্তো
দানার মতো দুঃখ,
অচল ঘড়ির জীবন প্রবাহ;
কালে-কালান্তরে পথহাঁটা
নবীন উল্লাসে অনুরাগ, পরিহাসের পুরোনো আখ্যান—
শোকের শ্লোকে উজ্জ্বল
অন্ধকারে গাঁথা মৃত্যুর শঙ্খমালা!
অলৌকিক অর্কেস্ট্রা
ওই নৈঃশব্দ্যের রথে উড়ে যাওয়া শূন্যতা
এক দুর্জ্ঞেয় আকাশ!
সময়ও রাত্রি ঝরাতে জানে!
নিরুক্ত পথে পাখা মেলে বসে থাকে দুরূহ
ময়ূর!
সাদা মেঘের দিনে ছাপার অক্ষরের মতো
নিনাদ তুলে মরে যায় মগ্ন মৌমাছি!
প্রতিবিম্বের ব্যবচ্ছেদে ব্যস্ত প্রান্তিক
মন তরঙ্গ আঁকে তার।
আসলে অলৌকিক অর্কেস্ট্রায় বেজে ওঠা
নিঃসঙ্গ শোক
পৃথিবীর শেষ সঙ্গীত!
স্রোতের গল্প
নিগূঢ় প্রতীতি ভেঙে জলেরা শৈবাল আঁকে
মুদিত নিঃশ্বাসে।
রাত্রির কী দোষ সূর্য ডুবে গেলে!
কিছু দান এমনই—মুছে যাওয়া
বাতাসের এসরাজ!
যে সুর—পাথরে প্রোথিত
সব দেয়ালে তার রঙ লাগে না।
এখানে এক আশ্চর্য নগরে পাখিরা ঝুলে
থাকে ঘণ্টীর মতো!
পাটিগণিতে নাজেহাল মাকড়সা জাল কষে
শরীরের সুতোয় জ্যামিতিক শব্দে!
তবু এক আলোর সংকেতে গাছেরা ছায়া ফেলে
পথিকের পায়!
পেছনে সেতুর নিচে জমে থাকে স্রোতের
গল্প!
_____________________
No comments:
Post a Comment