03 May 2018

গুচ্ছ কবিতা—শফিক আহমেদ




পদচ্ছাপ
যেখানে যেখানে পড়েছিল পদচ্ছাপ
এই পিচ্ছিল ধাঁধাঁময় পথে
আর যত পথিক ছিল আনমনা
পরিচয় লুকিয়ে রাখতো কৌশলে
সেইসব পদচ্ছাপের পরে আরও অনেক মানুষ নিশ্চয়ই এসেছিল এগিয়ে
মনে রাখার প্রত্যয় নিয়ে আমিও কি হেঁটেছিলাম সানন্দে?
তবে আজও কেন খুঁজছি সেই সে পথের মানবীকণ্ঠ
আর গেরস্থময় গোটা আঙিনায়
ছড়িয়ে রেখে বিচালি
তার সেই প্রথম তমোহর হাসি!
অজ্ঞাত গ্রাম নয় যদিও অজ্ঞাত
তার ঠিকানারাশি
আমি কী চিনি?সেই দৃশ্যত নিগূঢ় জটিল রহস্যের ফাগুনভরা দুপুরের
প্রায় তামাদি হয়ে যাওয়া বালিকার
ঘুঙুরের প্রথম তন্দ্রার ঘোরটি?



ছায়া, মোহগ্রস্ত হও
ছায়া, মোহগ্রস্ত হও
যতক্ষণ ছায়া
নদী,তুমিও বহমান
জলের কল্লোলে জলরঙ আঁকো
ধ্যানীর মত বও
রূপসীরা দেখুক তোমার
স্বচ্ছ স্ফটিকে
নিজস্ব প্রতিবিম্বিত মুখ।
তুমিও তাদেরকে নিজের কথা কও।





পথ ভেবে দেখার আগেই সুন্দর ছিলো না
এ পথ ভেবে দেখার আগেই সুন্দর ছিলো না
পিতার হাত ধরে যখন হাঁটতে থাকি
তখন এ পথ আমাকে সূর্য দেখায়নি
আদতে তখন অন্ধকারের সাথে খসরা হিসাবে মত্ত ছিলো এ
পথ।
যেমনটা মাতৃ গর্ভে ছিলাম হেতু বশত
উজ্জ্বল
এ পথ তেমনই ধাঁধায় উপনীত।
ছেড়ে দিলো পিতা অন্ধ অনুমানে
মাতা প্রবল আসক্তিতে জড়ালেন গোপন সোহাগে।
এ পথ পরিচয়ের আগে এতটা সুঠাম ছিলো না
তাকে আনত করতে হয়েছে মজুরের মত শ্রমে।
তারপর সভ্যতা আলো হয়ে এসেছে যদিও বা
পিতা হারিয়েছে অনেকটাই সেসব অনুজ্জ্বল নারীর প্রেমে।
মাতা আমার নিদারুণ কষ্টে আগলে রাখলেন সাত সমুদ্র
পিতার জাহাজ ডুবে যাবে এই ভেবে।
তারপর পিতা আরও পিতা হলো
মাতা মমত্ব কেবল মা-ই রয়ে গেলো।
সভ্যতা যদিও শুনি পিতার আদর্শে রঞ্জিত
আদতে দেখি মাতাই তার সর্বাংশে।





মাহমুদা
মাহমুদা নামের কাউকে চিনি না

মাহমুদা নামের কাউকে চিনি না
মাহমুদা নামের অস্তিত্ব জানি না

তবু মাহমুদা আমার পরিচিত কেউ
তবু মাহমুদা আমার আগ্রহের ঢেউ

মাহমুদা মাহমুদা বলে ভাসিয়ে দিয়েছি
একটি কাগজের নৌকো

মাহমুদার কাছেই আমার নিকুঞ্জ।

মাহমুদা নয় শুধু শস্য খামার
মাহমুদার জন্য সকলই আমার

আরও ঊর্ধ্বে আরও গগনে
যদি সে ওঠে যায়

তাতেও আমি নির্ভার নই
মাহমুদার দরদেই প্রস্ফুটিত হই।

মাহমুদার রূপ অজ্ঞাত নয়
মাহমুদার চোখ হরিণী সুন্দর

যাকে তাকে মাহমুদা ভাবতে রাজী নই
মাহমুদাই জানে আমি কিসে নত রই।




আমার একা থাকাতেই কেবল যৌবন ফুটে
আমার এই বৈশাখ ও কাটবে একা
চাইলেও কারো পাবো না দেখা

মন খারাপ, মন খারাপ, মনের উপর বেজায় চাপ
এদিকে বল্কল পরিহিতা যত মানবীর
পদচ্ছাপ

পা ফেলতে পারি না, কাঁটায় ভরতি
পথের পুরো নমুনা
যাবো কি যাবো না
তা জানি না,
যদি স্বয়ং নেমে এসে যমুনা
জাপটে ধরে আমায় তাতেও
ভয় কাটবে না
জন্মাবে না পুলক

চারিধারে শ্রোতামুগ্ধতায় চলছে কিচ্ছা কিংবা
আজব শোলক
আমি সায় তাতেও দেবো না

একা ঘরে পরে-মরে নষ্ট হবো
হয়তো কিছু পরেই শুদ্ধ হবো
বের হবো না তবু এই বৈশাখে

আমার একা থাকাতেই কেবল যৌবন ফুটে
একান্ত নিজের থেকে নিজের ঠোঁটে ঠোঁটে।

No comments:

Post a Comment