29 September 2016

চারণ গোপাল চক্রবর্তী



তোমার জন্ম,আমাদের প্রাপ্তি
উন্নত দেশের স্বপ্ন আজ বাস্তব
শান্তিকামী সকলে আজ সহযাত্রী।
হায়েনা পায়নি ক্ষমা,জনমনে তাই প্রশান্তি।
তোমাকে আজও বুঝেনি যারা
একদিন ঠিকই বুঝবে তারা।
ভুল-ভ্রান্তির হবে অবসান
তোমার হাতেই বাংলার মান।
বাংলা তোমার,তুমি বাংলার
বিশ্বে করছো মাথা উঁচু সবার।
বাংলা তোমার ভেঙ্গেছে বুক
শোকে ম্রিয়মাণ,তবু হাসিমুখ!
প্রতিশোধে নয়,প্রতিদানে তুমি
যুদ্ধে নেমেছো গড়তে আগামী।
সবুজ-শ্যামল প্রান্তর জুড়ে
তোমার দৃষ্টি উন্নয়ন,শান্তির তরে।
তুমি বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা
তুমি শান্তি,তুমি সমৃদ্ধি,তুমি অনন্যা
তুমি জননেত্রী শেখ হাসিনা।
শতায়ু হউক তোমার জীবন

এই কামনায় জনতা সাধারণ।

05 September 2016

সুলতানা শিরীন সাজি




তুমি আসছো বলে
তুমি আসছো বলে
আমার বাড়ীর বাইরে ঝোলানো উইন্ডচাইমের টুংটাং এ সুর শুনতে পাচ্ছি
তোমার আসার সুর।
তুমি আসছো একথা জানলেই
আমার উঠোন জুড়ে আলোকিত জোছনার মত
তোমার ছায়া এসে পড়ে।

আমি এ ঘর থেকে ও ঘরে যাই-
সবখানেই তোমাকে দেখি।
তুমি।
তোমার চোখ।
তোমার চুল।
তোমার হাসি।
তোমার প্রিয় বাতাবীলেবুর গাছ।
নিজের দিকে তাকাতে পারিনা আমি-
সব কাজ ভুল হয়ে যায়।

তোমার জন্য ঘুমচোখে সর্ষে ইলিশ রাঁধতে বসি রাত দুপুরে
ঘরের আসমানীরঙ পর্দা খুলে কাছতে বসি।
শুধু তুমি আসছো জানলেই এমনই হই আমি।
তোমার সূর্য ওঠা থেকে আমার সূর্য ওঠা ভোর।
কতদুর থেকে আসছো তুমি,
সে কথা আমার উঠোনের ঘাসফুলও জানে;
আর জানে একুরিয়াম এর নীল মাছের দল।
তোমার গীটার এর তার ছুঁতেই
বেজে ওঠে আনমনা সুর-
আমি গান গাই।
আমি গান গেয়ে ঘুরে বেড়াই 
কি গান গাবো যে ভেবে না পাই”।

তুমি আসছো সেই কতদিন পর,
আমি তোমার আসার সুর শুনতে পাচ্ছি।
গানের সুরের মত ভেসে ভেসে তুমি আসছো
আমি চোখ মেলে আছি আমার আকাশ বাড়ির একান্ত জানালায়!




পঙতিমালা
____
মন ছলকায় মনের ভেতর
চোখ ছলকায় চোখে
হাতের মুঠোয় হাতের আদর 
'জনই তা দেখে?

____২
পাখির স্বভাব উড়তে শেখা
আমার কেনো উড়াল দেবার আশ?
তোমার চোখে অবাধ সাঁতার 
রঙিন বুনোহাঁস!

_____৩
সাত সতেরোয় যে গান বাজে
মধ্য দুপুরবেলা
তোমার আমার পাখার বদল 
প্রিয়তর খেলা।

_____৪
তোমার ভিতর নদীর বাড়ি
খুঁজতে যত যাই
নদীও নাই বাড়িও নাই
বিরহগীত গাই।

_____৫
দূর বলেছে কাছে আসো।
কাছে যতই যাই
তোমার আমার দুরের জীবন
কোথায় তোমায় পাই!

_____৬
মন পবনের মাঝি বলে 
তোমার বাড়ি যাবো।
তোমার বাড়ি আমার বাড়ি
কতবার তা কবো?

_____৭
সর্ষে ফুলের হলুদ রঙে 
চোখের বয়স বাড়ে।
রংধনুর ওই সাত মোহনা
বুকের গহীন ঘরে।

_____৮
তুমি যদি আমার মত
শুধুই তুমি হতে
নীল জোছনার নদীর ঢেউ এ 
উদাস ভেসে যেতে।




সে
যতটুকু আলোর খেলা চলে চারিধারে
অন্ধকার সেখানে থাকে চুপিসারে।

বুকের কাছে হলুদ ফুলের মত সুবাসিত কলরব।
চোখ তার নীল নাকি কালো!
ঠোঁটের কাছে কালো তিলটাতে পৃথিবী ঘুমায় তার।
যতবার আলো থেকে অন্ধকারে যাই
ঠোঁটের সেই তিলটার ব্যাসার্ধের দিকে তাকিয়ে
একটা বই এর প্রচ্ছদ মনে আসে।

তার চোখ আর চিবুকের কাছে জমা রাখি
একলা দিনের আলো।
শুধু- 
অন্ধকার ভীড় করে এলে ভয় হয় খুব।
কালো কালো ছোপ ছোপ জমাট ধোঁয়ার মত ভয়।
সেইসময় সে কাছে এলে
ভাল্লাগে খুব।
কাঁপা হাতে তাকে ছুঁয়ে রাখি।
আর-
জগতের সমস্ত অন্ধকারকে তাচ্ছিল্য করি অনায়াসে!





অপাংক্তেয় এই উদাসী
খুব সাধারন জীবন যাপন।
বুকের ভিতর সুখের কাঁপন।
দৃষ্টি উদাস।
দূর পরবাস!
চোখের ভেতর একলা আকাশ।

ভালোবাসার বসতবাড়ি,
কেউ জানেনা কেউ বোঝেনা।
সুখের ভিতর দুখের রাজহাঁস।
একলা থাকে, একলা ভাসে।
ছায়ার ভিতর মানুষ বুঝি অমনি আসে?
এই বিজনে,সংগোপনে,
হাতের মুঠোয় হাতের ছোঁয়া ভালোবাসে।

অনেক দুরের উতল হাওয়ায়,বৃষ্টি নামায়।
চোখের পাতার ভিজতে থাকা কাজল কালোর কান্নাটুকু
মুছিয়ে যে যায়!
এই উদাসী অপাংক্তের, সুরের মায়ায় তাকেই শুধু ভালোবাসে।
দূর্বাঘাসের সবুজ চাদর জড়িয়ে রাখে যে আদরে।
ঘুমের মাঝে স্বপ্নঘোরে।

ঠোটের কাছে তিলের সুবাস,ফুলের মতন
যে জেনেছে সেই তো জানে ভালোবাসার জীয়ন কাঠি বাঁচায় জীবন।
একটা জীবন।
ছায়ার মতনমায়ার মতন।


নিয়াজ উদ্দিন সুমন



অচেনা পরী
শর আকাশের-
সাদা মেঘের ভাজে ভাজে
রুপালি রোদের আল্পনায়
আঁকা হয় তোমার রঙিন ছবি
বিরল সুখে বদ্ধ হৃদয়ের দরজা খোলে যায়
নতুন স্বপ্নে বিভোর হয় ক্লান্ত মন।

ঝিরি ঝিরি বাতাস যেমন
ছুঁয়ে দেয় শর এর কাশফুল কে
তেমনি তুমি ও ছুঁয়ে যাও আমায়

নিশি-দিনে নিজের অজান্তে।

গোপেশ দে




অনুরণন
উদ্ভ্রান্ত মস্তকে স্মৃতির অনুরণন
সন্ধ্যায় ভূত ভবিষ্য
দাঁড়িয়ে থাকে উদাসীন চোখে
আমার স্বচক্ষে ইকোলোকেশনে পথ হাঁটা
বাঁধা তবু সম্মুখের রাজা
চারপাশ ঘিরে....
স্মৃতির গলিত চর্বিতচর্বণ
জাবরকাটা পশুর মতন
তুমি আমি আমি তুমি একদা অরণ্যে
পারমুটেশন আর কম্বিনেশন
আর কুয়াশা ধাক্কা মারে আজ
মগ্ন চৈতন্যে নিউরনে অনুরণন।



রাতের ভেতর সকাল খুঁজি
একটা রাতের ভেতর আমি সকালকে দেখবো বলে রাত জেগে থাকি।রাত ঘন হয়ে তারা সপ্তর্ষি কিংবা চন্দ্রের সাথে বিক্রিয়া ঘটিয়ে সকাল হয়। সকালে আমি মহা বিরক্তি নিয়ে ঘুমিয়ে থাকি রাত দেখবো বলে। রাতের ভেতর আমি খুঁজতে থাকি রাস্তার কিছু উশৃংখল,পঙ্গপাল, ভবঘুরে,ফকির স্যাক্সোফোন বাঁশি। জীবন এদের কিন্তু বৈচিত্র্য হলেও সাদামাটা নয়।অভাবের মাঝে আছে চাঁদের সাথে বৈঠক পাতার নিমন্ত্রণ। জীবনের কিছু মানে বুঝে নেওয়ার অভিপ্রায়। ইট কাঠ কংক্রিটের ভেতরে প্রজননধারীরা রতিক্রিয়ায় মগ্ন।
ওটাও জীবন।
কোনো মানে নেই।
এদিকে রাতকে উলঙ্গ করে ওরা চাঁদের সাথে করে ভাব। সৃষ্টি করে বিবাগী সুখের ভেতরে সকালের লম্বা সফর। রাত শুধু স্বার্থক হয় কোনো অন্ধ স্যাক্সোফোনের কণ্ঠে, কিংবা উন্মাদের বকাবকিতে, কিংবা ফকিরের বাঁশি, ভবঘুরের সংসারহীন বিড়ির টান নিয়ন আলোর নিচে বসে।

আমি শুধু খুঁজি রাতের ভেতরে কোনো এক সকাল।





নিয়ন আলোয় স্নান
আমি একগ্লাস নিয়নের আলো খেতে চাই
এখানে প্রতিটি রাস্তার মলাট নিয়নের ভালবাসায় মুগ্ধ।
ঝলসিত হয়ে যায় প্রতিটি রাতবিরেতে হাঁটা-
অগুনতি পথিকগুলো আর স্থির ঝাউগাছগুলো
বেশ ভাল অতি মনোরম এই দৃশ্যে সব ঢাকা পড়ে।

নিজেকে বড়ই অচেনা লাগে এই নিয়ন আলোয় স্নান করে।
সবার লাগে কি?
লাগে হয়তবা।
সুপ্ত মনগুলো, লুপ্ত হয়ে থাকে এখানে সেখানে
কালিঝুলিমাখা কোনো আস্তিন আদলে, ফুটপাতে
রাস্তাবাসী, পঙ্গপাল, বাউন্ডুলেদের।
রাত্রিবেলা নিয়নের ধোঁয়ার নিকটে হেঁটে গেলে বেসুরো গলায়

গীটারের গান আসে জীবনমুখী মনোরম।
আর...
ঘরমুখো মানুষের পায়ের শব্দ নিতে নিতে আমার ভেতরে কত স্বপ্ন উঁকি দেয়!
স্বপ্ন দেখে যাই আমি একা একা এই পথিক নীরবে
তিন
শো বছরের ধূলি ধূসরিত এই সিমেন্টের জঙ্গলে।



সঞ্চারিণী



অনেকদিন পর অফিসের ব্যস্ততার ফাঁকে রূপম আজ সময় পেল জমে থাকা চিঠিগুলো পড়ার। অন্যদিনের চেয়ে আজকের সকালটা একটু ব্যতিক্রম লাগছে তার। গতরাতের ফ্লাইটে রূপমের স্ত্রী লিজা আর দুই ছেলে-মেয়ে; পরশ আর প্রিয়া বাংলাদেশে বেড়াতে গেছে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কাটাতে। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে স্কুল প্রায় দু’মাস বন্ধ থাকে। রূপমের বড় ছেলে পরশ এবার ‘ও’ লেভেল ফাইনাল দিল। মেয়ে প্রিয়া এখনও বেশ ছোট। সুখী সংসার রূপমের। স্ত্রী লিজা এখানকার একটি কিন্ডারগার্টেন এর শিক্ষিকা। প্রবাস জীবনে পরিপাটি সংসার পরিচালনার পরও রূপম সামাজিকতা সহ সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে বেশ সক্রিয় এবং সফল।

প্রায় দেড় যুগ ধরে লন্ডনে প্রবাসী রূপম। বিয়ের প্রায় পরপরই চলে আসে দূর প্রবাসে। তখন সে ছিল ম্যারিড ব্যাচেলর। সে সময়টা তার কাটতো দূর্বিষহ। চাকরীর মাসিক ভাতার অর্ধকেরও বেশী খরচ হয়ে যেত স্ত্রী লিজার সাথে কথা বলার ফোন বিল দিতে। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বশীল, কোমলপ্রাণ রূপমের প্রতি তার ছাত্রজীবন, কর্মজীবন এমনকি প্রবাস জীবনের সামাজিক চরাচরে অনুরক্ত হয়েছে বহু রমণী। কিন্তু কোন রমণীই রূপমকে তার কর্মপথ থেকে বিক্ষিপ্ত বা বিচলিত করতে পারেনি; তার সকল কাজে নিষ্ঠা আর সততার কারণে। মহিলা সমাজে রূপমের পরিচিতি ‘রমণীমোহন’ হিসাবে। তার নাম উচ্চারণ করে ভাবীদের আড্ডায় যেমন সরস আলোচনা হয়, তেমনি অবিবাহিতা মেয়েদের মাঝেও ঔত্সুক্য তার কথা, কাজ, পোষাক, ব্যক্তিত্ব আর সাহিত্য নিয়ে।

লন্ডনে একটি বাংলা পত্রিকা আর বাংলা ম্যাগাজিন সম্পাদনার কাজ করে রূপম। প্রচুর লেখা আসে তার কাছে। ফ্যাক্সে, ই-মেইলে আবার কখনও বা ডাকযোগে। নির্বাচিত লেখা গুলোর কোনটি কোন সংখ্যায় যাবে তা সাথে সাথে মনস্থির করে ফাইলে গুছিয়ে রাখে রূপম; যেন প্রয়োজনের সময় লেখাগুলো খুঁজে পেতে সুবিধে হয়। কিছু লেখার সরস অংশ পড়ে একা একাই মিটিমিটি হাসে রূপম। কখনওবা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে; পরে আবার নিজের হাসিকে সংযত করে। হাজার হলেও এটাতো অফিস। পরিশ্রমের মাঝেও এ সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতে আনন্দও আছে। স্ত্রী লিজা কখনও তার স্বামীর এ জগত্টাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। বেশ সংসারি মনের লিজা স্বামীকে সময় করে দেয় তার সাহিত্য-সংস্কৃতির কাজে; আর নিজে তার দুই বাচ্চা, সংসার আর চাকুরীস্থলের কলিগ সহ সামাজিকতার ব্যস্ততায় সময় কাটিয়ে দেয়।

এক এক করে খাম অবমুক্ত করে চিঠিগুলো মন দিয়ে পড়ছে রূপম। থেকে-থেকে তার মোবাইলটা বেজে উঠছে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সুরে-সুরে। স্বদেশপ্রেমী রূপম ধৈর্য্যের সাথে প্রতিটি ফোন কল রিসিভ করছে, আবার ফিরে এসে বসছে তার চিঠির ঝাপি নিয়ে। অদ্ভুত খামটি হাতে নিয়ে রূপম এ পিঠ ওপিঠ বার কয়েক দেখল পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে। ‘মুগ্ধা হক!’ বাংলাদেশ থেকে পাঠানো। বাংলাদেশে এত ম্যাগাজিন, পত্রিকা থাকতে এত কষ্ট করে টাইপ করা গল্প এই সুদূর ইংল্যান্ডে কেন পাঠালো এই মানবী? খাম এর উপর এবং খামের ভেতরের গল্পটা ও টাইপ করে লিখা। লেখিকার নামটা পড়ে রূপম কেন যেন একটু হোচট খেল। এমন নাম আগে কখনও শুনেনি।

এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল পুরো গল্পটা, এবার রূপম তার বুকের হৃদপিণ্ডের সরব উপস্থিতি টের পেল যেন। লেখার শব্দ চয়নে পরিমিতিবোধ, শালীন উপস্থাপন, গল্পের ঘটনার গতিময়তা পরিচিত কোন লেখিকার সাথে যেন মিলে যাচ্ছে। গল্পকার মানবী যেই হোক না কেন তিনি যে বেশ দক্ষ লেখিয়ে তা তার লেখার ধাঁচেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অবাক করা ব্যপার হলো গল্পটা যতই পড়ছে; রূপমের মনের অচেনা এক জগতের সবগুলো রুদ্ধ দ্বার যেন এক এক করে খুলে যাচ্ছে। গল্পের কিছু কিছু জায়গায় বোধ আর অনুভূতির কোমল ছোঁয়ায় রূপমের মন ক্রমশঃ দ্রবীভূত হয়ে পড়ছে। ‘আলটপ্কাছ’ শব্দটায় রূপমের চোখ থমকে গেল। এ শব্দটি তার খুব কাছের, খুব ভাললাগার, খুব প্রিয় একজন লেখিকার লেখায় সে অনেকবার পেয়েছে। যাকগে, গল্পটা রূপমের পড়া হয়ে গেল। একটা নিটোল প্রেমের গল্প। গল্পের বিষয়বস্তুতে প্রেমের যে আকুতি প্রকাশ তা সত্যিই রূপমকে স্পর্শ করে গেল। অস্ফুটস্বরে রূপম বলে উঠলো, ‘‘চমত্কার তো!’’

জাফলং এর পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে ক্ষাণিকটা এগিয়ে গেল অনিমেষ। জয়ার এলোচুল বাতাসে উড়ছে। কলপ দেয়াতে চুলের রূপোলী রঙ একদম ঢেকে গেছে। জয়া আজ লজ্জাবতী ফুলের রঙে রঙ মিলিয়ে হাল্কা বেগুনি জামদানী শাড়ি পড়েছে। ঘন চুলে মেখেছে জুঁই ফুলের সুবাস মাখা তেল। তেল খুব একটা দেয় না যদিও কিন্তু ইদানিং মাথাটা কেমন যেন দুলে দুলে ওঠে। তাই তেল দেয়া। রূপম একদিন কথায়-কথায় ফোনে জয়াকে বলেছিলো, ‘জয়া দি, আপনার সাথে লজ্জাবতী গাছের খুব মিল আছে। লজ্জাবতী ফুলের রঙটি বেশ।’ রূপমের কথা মনে করেই জয়া আজ লজ্জাবতী রঙের শাড়ি পড়েছে। মুখে হাল্কা প্রসাধনের প্রলেপ মেখে কপালে দিয়েছে হাল্কা বেগুনি টিপ। অনেকদিন পর এমন করে সেজেছে জয়া। মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। জয়ার কল্পনায় রূপম তার পাশাপাশি হাঁটছে। রূপম জয়াদি কে মাঝে মাঝে ‘দেবী’ ও ডাকতো। রাজশাহী বিশ¦বিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকা কালীন তাঁত শাড়ি পরণে, লম্বা দুই বিণুনী দুলানো স্নিগ্ধা রমণী জয়াকে অনেক ছাত্রই ‘দেবী’ নামে সম্বোধন করতো।
শুধু দূর থেকে ‘দেবী’ শব্দটা উচ্চারণ করে পাশ কেটে চলে যেত ওরা; জয়ার ব্যক্তিত্বের সামনে সাহস করে এসে দাঁড়িয়ে কেউ কিছু বলতে পারেনি কখনও। জয়াদি কে কয়েকবার দেখার সৌভাগ্যে হয়েছে রূপমের। বিভিন্ন সাহিত্য আসরে। ভীষণরকম শালীনতা, মার্জিত আচরণ, কথা আর হাসিতে পরিমিতি সব মিলিয়ে জয়াদি কে রূপমের মনে ভাললাগার সর্বোচ্চ আসনটি দিতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু জয়ার মনে রূপমের স্থানটি কেমন তা জয়া নিজেও বুঝতে পারতো না যদি না তার হঠাত্‌ করে এই মারাত্বক অসুখটা ধরা পড়তো। জয়া ভেবেছিল এ যাত্রায় আর নিস্তার নেই। ক্যান্সারে তার মৃতু অনিবার্য। কিন্তু না, মরতে ইচ্ছে হলো না জয়ার। জয়া বাঁচতে চায়। তার জীবনের অসম্পূর্ণতাটুকুন পুষিয়ে নিতে চায় রূপমের সাথে তার কল্পনার রোমান্সে।

নিজের এহেন পরিবর্তনে জয়া নিজেই খুব অবাক হয়। উত্তর চল্লিশে তার জীবনে ‘বেলা শেষের গান’ হয়ে কিনা প্রেম এল? জয়ার মনের অবস্থার এ দিকটি যদিও রূপম জানতোনা কিন্তু এক আধটু যে রূপমের কাছে ধরা পড়েনি; তাও কিন্তু নয়। রূপম বুঝে ওঠার আগেই হেসে, কথার মোড় ঘুরিয়ে নিয়ে জয়া নিজেকে সামলে নিত।
রূপম মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবতো; জয়াদি কেন কথার ফাঁকে ফাঁকে আবৃত্তি করে ফোনে গান শুনায় গুনগুনিয়ে। তার সাথে কথা বলতে এত কাব্যিক আর এলো হয়ে যায় কেন তার প্রিয় জয়াদি? জয়া প্রতি সকালে রূপমের ফোনের অপেক্ষা করতো অধীরা হয়ে। ডাক্তারের দেয়া ঔষধ আর স্বামী সন্তানের ভালবাসার চেয়েও যেন মহৌষধ রূপমের কথা। জয়ার মনে তার সাহিত্যিক বড় ভাইটির আদর্শ ছায়া যেন মূর্ত রূপমের মাঝে।

অনেক বছর আগে জয়া যখন ব্রিষ্টল শহরে ছিল; তখন একবার কথা প্রসঙ্গে রূপম জয়াকে বলেছিল- ‘জয়া দি যুদ্ধ আর প্রেমের কোন সময় অসময় নেই।’ সত্যিই যে জয়ার তাই হলো। জয়ার জীবনের এই প্রেম জয়াকে দিল জীবনে বেঁচে থাকবার নতুন আশ্বাস, অকৃত্রিম প্রেরণা। জয়া তাই বাঁচতে চায়।
 গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কাটানোর বেশ গুছানো আয়োজন নিয়ে দেশে এসেছিল বটে; তবে কেন যেন অস্থিরতায় জয়ার মন মাতাল। মনের এই নবজাগা অস্থিরতার তাড়না আর তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় জয়ার নিজের কাছেই নিজেকে অচেনা লাগছে। স্বামী অনিমেষ আর ছেলে প্রবাল সহ সিলেটের জাফলং, লাক্কাতুরা পাহাড় দেখতে যাওয়া সব কিছুই চলছে কিন্ত্ত জয়ার মনটা যেন কোথাও নেই। উদাসীন ভাবটা জয়ার স্বামীর চোখ এড়ালো না।

জয়াকে প্রশ্ন করলেন শ্রী অনিমেষ-‘এবার তোমার কি হয়েছে বলোতো জয়া?
বিয়ের পর এই প্রথম তোমাকে আমার অচেনা লাগছে। মনে হচ্ছে কাছের মানুষ হয়েও তুমি অনেকটা দূর। যেন অশরীরী কেউ তুমি। যার ছায়া পর্যন্ত নেই আমার কাছে। শুধু অবস্থানটুকুন টের পাওয়া যাচ্ছে। আমি তোমার গা স্পর্শ করলে; তোমার কাছে এসে দাঁড়ালেই তুমি চমকে চমকে উঠো। অপ্রকৃতস্থ আচরণ কর। আমি কি জানতে পারি জয়া, কেন তোমার এ অস্থিরতা?’
জয়া উত্তরে কি বলবে, ভেবে পাচ্ছেনা। আসলেই কি এমন কথা পৃথিবীর কাউকে বলা যায়? স্বামীর কাছে নিজের মনের ভাবটা আড়াল করতে শুধু বললো-‘নাহ্‍। তেমন কিছু নয়। এখানে আসার আগে বেশ কষে ডাইয়েটিং করছিলাম তো, তাই হয়তো প্রেসারটা লো যাচ্ছে। যা মোটা হয়ে গেছি ইদানিং।’
ঝর্ণার জলে ভিজতে লাগলো জয়া। জয়ার গায়ের লজ্জাবতী রঙ জামদানী শাড়িটা ভিজছে। জয়া চোখ বুজে চুল ঝাঁকিয়ে হাসছে আর বলছে-‘কি যে ভাল লাগছে! আহ!! পানিটা এত ঠান্ডা!’

সিলেট থেকে ঢাকা ফিরে এসে ছেলে প্রবালের জন্য প্লে-ষ্টেশন, সিডি সহ জুতা আর ড্রেস কিনতে নিউমার্কেট গেল জয়া। নিউমার্কটের বলাকা গেইটের কাছে বসে থাকা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কদবেল, আমলকি, আমসত্ত্ব কিনে বাসায় ফেরার পথে জয়ার খেয়ালী মনে ইচ্ছে জাগলো রূপমকে নতুন করে আবিস্কার করার। তাই পরদিন জয়া একা একা গেল নীলক্ষেতের ‘বাকু শাহ্‍ মার্কটে’।
গল্পটি বাড়িয়ে দিল ওখানকার একজন টাইপরাইটারের কাছে। সেই সাথে বাড়িয়ে দিল একটি নীল খাম। গল্পের নাম...লেখিকাঃ মুগ্ধা হক। টাইপ করতে লাগলো টাইপরাইটার...

অণিমেষ এর অবকাশকালীন ছুটির মেয়াদ শেষ বিধায় ম্যানচেস্টারে ফিরে যেতে হবে। কথা ছিল জয়া আরও একমাস বেশী থাকবে দেশে। ছেলে প্রবালেরও ভালই লাগছিল বাংলাদেশে থাকতে। আরও কিছু জায়গায় বেড়ানোর প্লান ঠিক করে রেখেছে প্রবাল। নন্দন পার্কে তো যাওয়াই হোল না। তা ছাড়া নতুন বিয়ে হওয়া পিসির শ্বশুরবাড়ীতেও যাওয়া হোলনা। কিন্তু নাহ্। জয়া ফিরে যেতে চাইছে ম্যানচেস্টারে। বলছে- ‘এই গরমে কি থাকা যায় বলো? কি বিচ্ছিরি বৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। শেষে না আবার বন্যার কারণে আটকে যাই। চলো চলো। আমাদেরকে তোমার সাথেই নিয়ে চল ইংল্যান্ডে।’
মানচেস্টার ফিরে এসে জয়ার মনের অস্থিরতা আরও বেড়ে গেল যেন। বুকটা কেমন যেন ধর ফর করে। মাথাটা দুলে ওঠে। সমস্ত শরীর ভেঙ্গে চুরে যায় যেন। প্লেয়ারে ক্যাসেট ঢুকিয়ে প্লেয়ার অন করে জয়া- ‘সোনার কাঠি রূপোর কাঠি তোমার হাতে দিলেম...’ সাইফুল ইসলামের গাওয়া এ গানটি এবার ঢাকার ‘গীতালী’ ক্যাসেটের দোকান থেকে সংগ্রহ করে এনেছে জয়া। গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জয়া।

অণিমেষ পরদিন যথারীতি অফিসে চলে গেল সকালে। স্কুলের ছুটি শেষ হতে আরও কিছুদিন বাকি, তাই প্রবাল অঘোরে ঘুমুচ্ছে নিজের ঘরে। অণিমেষকে বিদায় করে বিছানায় আলুথালু হয়ে ঘুমুচ্ছে জয়াও।
ক্রিং .. ক্রিং.. ক্রিং.. ক্রিং ফোনে চারটি রিং বাজতেই ঘুম জড়ানো কন্ঠে জয়া ফোন রিসিভ করে বললো, হ্যা লো...
রূপমের কণ্ঠস্বরে লঘু আমেজ। একটু হেসে রূপম জিজ্ঞেস করলো- ‘হ্যালো; মুগ্ধা হক কেমন আছেন?


অন্তর্জাল বই (ই-বুক) “কথাকাব্যের চক্রবাক”






শ্রাবণের তুমুল বৃষ্টিদিনের মুখভার আকাশটা যান্ত্রিক নগরের ব্যস্ত হাওয়ার সুরে আবার জেগে উঠলো নতুন রূপে, জায়গা নিলো কলমের ডগায় সেইসব কথামালা।
কথামালার ডগায় ভর করে এই প্রজন্মের চারজন লেখিকার লেখা নিয়ে ওয়েবজিন ‘সংবেদ্য’ থেকে প্রকাশিত হলো অন্তর্জাল বই (ই-বুক) “কথাকাব্যের চক্রবাক”

এখানে লিপিবদ্ধ কথাকাব্যগুলো চাররঙা কথায় জানিয়ে দেয় নাগরিক জীবনের চলমান দিনলিপিকথা। বইয়ের ভেতরে বন্দি হওয়া লেখিকাগন প্রত্যেকেই ইতোমধ্যে নিজ নিজ পথের স্বাক্ষর রেখেছেন।

আশা করছি কথাকাব্যগুলো কবিতা প্রেমীদের মুগ্ধানন্দ করে তুলবে এই সব দিনরাত্রিতে...

সকাল রয়
সম্পাদক


ওয়েবজিন  “সংবেদ্য”
______________________________________________________

www.mediafire.com/download/ow4h66w6q6zdrzy/Kothakabbar_Chokrobak.pdf
______________________________________________________


হাফিজ রহমান


শিহরিত বৃষ্টি
আষাঢ়ের শিহরিত বৃষ্টি সারা দিনমান ক্লান্তিহীন ঝরে,
আমি তার কতটুকু হৃদয়ে করেছি ধারণ,
অসীম নির্জনে দুজনে ভিজবো বলে।

সীমাহীন খোলা প্রান্তরে, নরম ঘাসের বিছানায়,

দুজনে নিবিড় হবো।
তৃষ্ণার্ত ওষ্ঠ বেয়ে ঝরে পড়া বৃষ্টির নির্মল জলের স্বাদটুকু
তুমি যত্ন করে রেখে দিও তোমার ওষ্ঠে জড়িয়ে।
শিহরিত তনুখানি ধরবো যতনে পালকের মত-
মেখে নেবো সারা অঙ্গে স্বর্গের সৌরভ।
মুহূর্তগুলো অনন্তকাল ধরে রাখবো যতন করে,
শুধু তুমি আর আমি আর প্রেমাসক্ত খোলা আকাশ!

তারপর স্বপ্ন হারাবে- জেগে দেখবো বালুচরে
ভেসে আছি একা আমি, তুমি নাই পাশে,
হারাতে পারবো না যে তাই লাগে ভয়,
তাই তো ভালবেসে দূরে দূরে রই,
আর শরতের শিউলিতে তোমাকে খুঁজি!



সেই শরতের ভোর
পিছনে ফিরে দেখি, সেই শরতের ভোর,
নরম ঘাসের বুকে শিউলি ঝরানো পথে
হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত আমি-
সারারাত জেগে জেগে ভেবেছি যে কথাগুলো,
আমার সারা অবয়বে সে কথা লিখে নিয়ে, ভালবাসি-
এইটুকু বোঝাতে, যতবার তোমার সামনে গেছি,
আমার উদ্ভ্রান্ত মুখের পানে চেয়ে একটা বর্ণও কি বুঝতে পারোনি তুমি?
নাকি প্রতিবার না বোঝার ভান করে দিয়েছো ফিরায়ে।

যতবার সামনে দাঁড়াই, লেখাগুলো কি অস্পষ্ট থেকে যায়
আমার খারাপ হস্তাক্ষরের মত?
কোনদিন পড়তে পারোনি তুমি
সে লেখা গোপন থেকেছে হৃদয়ে আমার।
মুখেও বলিনি আমি কি এক গভীর অভিমানে,
তাইতো শিউলি ভোরের সেই প্রেমগাঁথা
কখন যে ঝরে গেছে বিবর্ণ শুষ্ক শীতে।
আর এক বসন্তদিনে তাই তুমি হেঁটে যাও
আমার হৃদয় দলে কত সহজেই,
আমার না বলা কথা ঝরে যায় শুকানো শিউলি হয়ে।

এতোদিন পর মনে হয়, বুঝতে যদি সেই হৃদয় লেখা,
এই যে পৃথিবীর আজকের ছবিগুলো অন্যরকম হতো!
হয়ত আজ একাকী বিরহী নই,
তোমার হাত ধরে হাঁটতাম নরম ঘাসের বুকে,
সূর্য যে আলো ছড়াতো তোমার মুখে
সে আলোর শক্তিতে পেরিয়ে যেতাম নরকের সীমানা,
কত অনায়াসে-




Bottom of Formকথোপকথন
তার সাথে কথা হয়, কিযে বলি, কেন বলি,
কিভাবে বলি, কিছুই কি মানে হয়?
এই যে যেমন-
: তোমার আকাশে চাঁদ আছে?
: চাঁদ কোথায়? খটখটে রোদ!
 একটু মেঘ আছে- হয়ত বৃষ্টি হবে!
 আষাঢ়ের মেঘতো!

: আমার মনেই থাকেনা, তোমার ওখানে দিন!
 আমার এখানে রাত, আরো পরে চাঁদ উঠবে,
আমি হয়তো দেখতে পাবোনা, ঘুমিয়ে যাবো!
আচ্ছা, তোমার টবে ফুল ফোটে?
: ফোটে তো, একটা লাল গোলাপ ফুটে আছে, তোমাকে দেবো।
: কি করে নেবো? আমি যে দূরে, যোজন যোজন!
: মন দিয়ে নাও!
: কি যে হয় ছাই, ভালো লাগে না কোনকিছু!

তারপর শুনশান, চারদিক নৈঃশব্দ ছেয়ে থাকে,
কি যে এক অস্থিরতা ঘিরে রাখে!

এভাবেই কতক্ষণ যায়, অস্থিরতা, আবার শুধাই-
: আচ্ছা, এটা কি নেশার মতন?
: কোনটা?
: এই যে অর্থহীন কথা বলা।
কতকিছু বলি, কিছু মানে হয়, কিছু হয় প্রলাপ,
কিছুতো মনেও থাকেনা।
: প্রেমে পড়লে এমন হয়, তুমি প্রেমে পড়েছো।
হা হা হা...

তারপর যতক্ষণ যায়, তোমার হাসির শব্দ প্রতিধ্বনি হয়,
আমার হৃদয় গুহায়- বার বার যেন বলে যায়,
ভালো আমি বেসেছি তোমায়!

তবুও সজাগ হই, নিজেকে শাসাই।
তোমাকেও বলি, অত প্রশ্রয় দিওনা মেয়ে,
নিজের দিকে চেয়ে একটু কঠোর হও!
মাঝে মধ্যে ধমক-ধামক দাও!
তোমার জন্য মরতে পারিনা,
আরেক জীবন বাঁচতে পারি, যদি হাত বাড়াও!
সত্যি আমি আসবো, তুমি যদি সাহস দাও!





এ কেমন ভালোবাসা
কী প্রচন্ড শক্তি ধরে একটা শব্দ- ভালোবাসি
তুমি যখন ডাকলে, আমি নরকের কিনার থেকে শুনলাম,
আর ফিরে এলাম নবযৌবনের উদ্ভাসিত আলোর ঝলকে!
সুদূর থেকে তোমার সে ডাক, আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে কি আলোময়তা ছড়িয়ে দেয়,
আমাকে নিয়ে যায় অমরার পানে।
এতদূরে, তবু মনে হয় পাশে আছি কোন অদৃশ্য বাঁধনে!

এ কেমন ভালোবাসা কে জানে?
শুধু এটুকু জেনেছে হৃদয়, বিশুদ্ধ হৃদয়ের ডাক,
পৌঁছে যায় প্রার্থিত হৃদয়ে।
তাকে উপেক্ষা করার কোন শক্তি থাকেনা।
এতোটাই শক্তিশালী শব্দ তুমি- “ভালোবাসি”!

তুমি যেদিন বললে ভালোবাসি,
সেদিন হতে বদলে গেল চিরচেনা এ ভুবন,
আকাশে আকাশে ধ্বনিত হলো- ভালোবাসি, ভালোবাসি-
সাগরের কল্লোলে ধ্বনিত হলো- ভালোবাসি, ভালোবাসি





তোমার আশায় থাকি
চারিদিক যখন নিঝুম হয়ে আসে,
আমার প্রতীক্ষা শুরু হয়।
তোমার আসার সময় শেষ হয়ে যায়।
কতক্ষণ, কতক্ষণ, অপেক্ষা শেষ হয়না,
অসহ্য সময় কাটেনা, কাটেনা।
আমি থাকি প্রতীক্ষায় তোমার ।

অবশেষে যখন অপেক্ষা অসহ্য হয়,
ঘর ছেড়ে চলে যেতে পা বাড়াই দরজার দিকে-
তখনই তুমি এসে হাত ধরো, ফিরে আসি নিজের ভুবনে।
তুমি এসে হাত রাখো কপালে আমার
সব ক্লান্তি মুছে যায়, অভিমান তবুও থাকে!
-দেরী কেন? আমার সময় যে কাটেনা।
-দেখতে চেয়েছি, কতটা উতলা তুমি, কতটুকু ভালোবাসো,
-এতোদিনেও বুঝোনি তুমি?
তুমি ছাড়া শুন্য হয় আমার জীবন, যেন এক বিরানভূমি!
যেমন দেখেছি পাহাড়ের বিরহী বাতাস,
কেঁদে যায় দেয়ালে দেয়ালে
প্রতিটা গুহার মাঝে সারাক্ষণ হতাশার শ্বাস ফেলে যায়।
যতক্ষণ থাকো, তোমার নরম হাত ছুঁয়ে থাকে কপালে আমার
কখনো বা উষ্ণ ঠোঁট নেমে আসে
আবার ছুঁয়ে তপ্ত কপাল- কি এক গভীর আবেশে
নিবিড় মিলনের স্মৃতি বুকে নিয়ে কখন ঘুমাই,
জেগে দেখি, তুমি নাই-
আবার শুরু হয় অপেক্ষার কাল, এভাবেই অনন্তকাল,
এভাবেই দিবস রজনী- আমি যেন
তোমারই আশায় আশায় থাকি।



শেষ বিকেলে তোমার আশায়
সারি সারি বাবলার বন পেরিয়ে
আকন্দ, বনকলমীর ফুলদল মাড়িয়ে
হলুদ শাড়িতে নিজেকে জড়ায়ে যখন দাঁড়াতে এসে,
শুধু তোমার মুখে সূর্যের যে আভাটুকু লেগে
যে মোহময় আবেশ ছড়াতো,
তাই দেখবো বলে থমকে দাঁড়াতাম
সেই কতদিন আগে, শুধু তোমার অপেক্ষায়,
কেটে গেছে কত সুবর্ণ সময়!
অপেক্ষায় থেকে থেকে কখনো বা বাবলার
হলুদ ফুল কালো হয়ে গেছে,
কখনো বা স্তব্ধ বাতাস হঠা ফেলেছে দীর্ঘশ্বাস,
কখনো রক্ত শুষে চিনে জোঁক গোল হয়ে গেছে,
কখনো মলিন ঘাস কপোল চুমে এলিয়ে পড়েছে,
তবু আমি অপেক্ষায় থেকেছি, শুধু তোমার
সোনালী হাসি দেখবো বলে,
শিহরণ জাগানো সে হাসির শব্দ শুনবো বলে!

দীর্ঘ সে অপেক্ষা একদিন শেষ হয়,
তোমার হাসি হারিয়ে যায় কোন অখ্যাত বনে,
তখনও আমার অপেক্ষা, বোকার মত!
অথচ আমার অপেক্ষায় কত চাঁদ জাগে,
কত চাঁদমুখ জাগে আমাকে ছোঁবে বলে,
আমি তার রাখিনি খবর
তাদের সে সুখের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে
ভাসবো কি সুখের ভেলায়?

জানি না, আমি জানি না, শুধু তোমার মুখ মনে আসে,
শুধু তোমার হাসির ঘ্রাণ ভাসে বাতাসে,

আমি বহতা নদীর কুলে উদাস বসে থাকি!