27 December 2017

গুচ্ছ কবিতা- সোয়েব মাহমুদ



দ্যাখা–অদ্যাখা কাব্য: ১
আমি চাই তোমার সাথে কোথাও কখনোই আমার দেখা না হউক,
আমি চাই, প্রানপনে চাই।
তাই এড়িয়ে যাই, তোমার হাটা পথ
এড়িয়ে যাই পরীবাগ, মালিবাগ,বাসাবো এবং ছায়াবীথি।
এড়িয়ে যাই প্রানের শহরটাও।
এখন বুঝবে না তুমি,
যে তুমি ভালোবাসা মাড়িয়ে হেটে গ্যাছো,
যে তুমি অস্বীকার করে পালিয়েছো ভালোবাসা থেকে,
যে তোমায় ইতিহাস মনে রাখবে হত্যাকারী,ভালোবাসার!
সেই তোমার সাথে আমার কোনো কথা নাই।

তুমি আজীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামী ভালোবাসার,
বন্দিত্ব তোমার সোনার খাচায় আর কৌশলী ভিড়ে।
আমি চাই তোমার সাথে এ জন্মে আমার আর দ্যাখা না হউক।
আমি চাই আমার সাথে একবার তোমার দ্যাখা হউক।

আমি চাই একবার,
এককাপ ধোয়া ওঠা চায়ের কাপে,
চোখে চোখ রাখা আমার তোমার দ্যাখা হউক।
আমি চাই একবার,
তুমি আমার চোখে চোখ রেখে দ্যাখে নাও আমি তোমাকে,
আমার চোখে তোমাকে কিভাবে দ্যাখি?
একবার দ্যাখা উচিত তোমার।

মিথ্যা ঠাস-বুনটের শহরে আমি চাই, একবার
আমার সাথে তোমার দ্যাখা হয়ে যাক।
আমি শুনতে চাই আমার তুমি কি বলো আমায়?
আমি দ্যাখাতে চাই তোমায়, আমার অস্তিত্ব।
আমার জন্ম-মৃত্যুর পরিসংখ্যান,
আমার প্রতি মুহূর্তে হারিয়ে ফেলা নি:শ্বাস,
আমার বেগুনি পদ্ম, তোমার রংমেশানো সত্য।
আমার সান্ধ্যকালীন ফটোগ্রাফ কি বলে তোমায়?
আমি চাই, হ্যা হ্যা হ্যা আমি খুব করে চাই।
আমি চাই তোমার সাথে আমার দ্যাখা না হউক।
আমি চাই আমার সাথে একবার তোমার দ্যাখা হউক।
দ্যাখা-অদ্যাখা কাব্যের শেষ হউক,অন্তত।




দ্যাখাঅদ্যাখা কাব্য: ২
এক ক্ষয়িষ্ণু শহরের ইট-পাথরে ঘষেঘষে
বুকে বয়ে নিয়ে যাওয়া হৃদয় আর দেয়ালে ভর দেয়া কথাগুলো;
যা বলা হয়নি তোমায়।
তা পাশে নিয়ে বসে বসে দ্যাখছি,
আত্মবিধ্বংসী খেলায় মত্ত আমি
দু-চোখ ভরে দ্যাখছি বিলবোর্ড ভালোবাসার শহর তোমার।
কত উজ্জ্বলতা, কত আত্মপ্রবঞ্চক হাসি নিয়ে,
সূখ সূখ হাসি মুখ নামক বিজ্ঞাপনচিত্রে তুমি, ফেইড ইন অর আউট।
ঝুলে আছো ভালোবাসা কটাক্ষ করে!

তাই আমি চাই,
হ্যাঁ, আমি চাই তোমার সাথে কখনওই আমার দ্যাখা না হউক!
আমি চাই অন্তত একবার মিথ্যে করে হলেও তোমার সাথে,
তোমার দ্যাখা হউক!

আমি চাই আমাদের অদেখা অথচ খুব চেনা দেবদারু-রাধাচূড়ার
সারিসারি ছায়ায়, এক নিয়তি নির্ভর জেব্রাক্রসিং এ
কিংবা কোনও রাস্তায় কবিতাময় লিফলেটে,
অথবা কোনও এক ২৩শে, পরীবাগের কোনায়; আমার যে তুমি,
কেবলই আমার যে তুমি,
আমার সাথে সেই তোমার দ্যাখা হয়ে যাক...



দ্যাখাঅদ্যাখা কাব্য: ৩
রিকশা কিংবা বিছানার বাম পাশটায় অথবা হৃদয়ের বামঅলিন্দে
একটা অসহ্য শূন্যস্থান; আশ্চর্য শূন্যস্থান নিয়ে পরিব্রাজক আমি।
বেঁচে থাকি নিঃশ্বাস নেই এই যোণীবাহিত পৃথিবীতে।

অদ্ভুত নস্টালজিক কিছু শব্দের হাহাকারে আমার ঘুম আসেনা।
তুমিহীন তুমিময়তার সেই শূন্যস্থান হিলিয়ামে পূর্ণ কানায় কানায়
হাইড্রোজেনের দুই জোকার উড়ে যাওয়া
সাংকেতিক পানির উপচে পড়া ঢেউ নিয়ে তাই
রিকশাটাকে নদী ভেবে
রাস্তায় হাটি আমি, বিছানাটার সমুদ্র হোয়ে ওঠা দ্যাখতে দ্যাখতে
একটা নিস্তব্ধতার একাকীত্বে গোল হোয়ে বসে থাকি
পাশের বারান্দায়।
অপেক্ষা আর অপেক্ষায় কাটে আমার সোয়া দুই বছর!
ছুটি থেকে ছুটি নেয়া হয়না আমার,
দেয়া হয়না এক দিয়াশলাই বক্সেভালোবাসা মসলিন।

আমি চাই
তাই আমি চাই তোমার যে তুমি; তার সাথে
আমার কখনওই যাতে দ্যাখা না হয়।

তোমার; তোমার সাথে আমার দ্যাখা সে'তো ব্রিটিশ
সাম্রাজ্যে এক নিগৃহীত বাংলার ইতিহাস!

তাই এই আমি চাই,
খুব কোরে চাই এই স্বাধীন বাংলায় আমার যে তুমি
সেই সন্ধ্যের ডুবে যাওয়া আকাশে লাল শাড়ি ছোট্ট লাল টিপে
ছাদে দাড়িয়ে
আমায় খোঁজায় ব্যস্ত যে অস্থির তুমি
সেই তোমার সাথে আমার দ্যাখা হউক, আবার।
আবার,
রিকশার বা'য়ে বসো তুমি, বিছানার বা'য়ে শুয়ে পড়ো।
আমি পাশে বসে আঙ্গুল ছুই আঙ্গুলে,
ছুয়ে দেই তোমার ঠোঁটের তিল আমার নিঃশ্বাসে,
সরিয়ে এলোমেঘ চুমু আকি কপালে তোমার,
কিছু শব্দে আবার কিছু কথা হউক,
হউক লেখা একটা কবিতা আবার দ্যাখার পর হউক
ফুচকাতে ভর করা এক সন্ধ্যে।
একটা পায়ে হাটা পথে গোলাপ ফুটুক; আবার।
একটা ছবি হউক ভোরের,

একটা ঘর হউক আমাদের; ছোট্ট এক ঘর।
তোমার আমার মাঝে ছোট্ট একটা বালিশ হউক,
ছোট্ট এক আঙ্গুল আধোবোলে বাধুক আমাদের।

তারপর ঠিক ৪৭ বছর পর আমি মরে যাই তোমার ঠোঁটে...
৪৭ বছর পরবর্তী মৃত্যুর আগে
ভালোবাসা-বাসি সংসারের জন্য হলেও আমার
তোমার আমার সাথে দ্যাখা হউক অথবা হোয়ে যাক...





শনিবারটা ভালো লাগে না আমার
প্রতিটা জীবিত মানুষের ভেতর একটা করে মৃত মানুষ হাটে,
অস্থিরতায়।
প্রতিটা পরাজয়ে তুমি শানিত হও,
প্রতিটা জয়ে এগিয়ে যাও ধ্বসে,
তুমি সেই আঙুল যা একদিন ঠিক
যথেচ্ছাচারে কেউ ঠেকিয়েছিলো তোমার ঠোঁটে।
সে যাকগে মলয়, জায়েদ...একদিন ধ্রুব আবার ঘরে ফিরবে কবিতার ঘরে
একদিন ডাক্তার বুঝবে একটা কবিতা লেখার জন্য জন্মের সময়,
তা আলোকিত রেস্তোরাঁর ছাইপাশে নষ্ট হচ্ছে।

হিমেল, আপনার সাথে রাস্তায় চলাচল খুব কম আমার,
হয়ত টুকটাক কথা হয়, দেখা সে আরও কম।
সৌমেন এক ভ্রষ্ট নিরোধ,
খেয়ে দিচ্ছে রাস্তায় খেলা ফুটবল অথবা ইথারের কবিতা।
পেছাচ্ছেন কবিতা সে'তো জন্মেই পরাজিত ঈশ্বর এক,
তাকে পরাস্ত করবার, তাকে জাদুঘরে তুলবার কোনও যোগ্যতা
কলেরা হাসপাতালের সাবেক কর্মীর আছে বলে মনে হয়না।

সকাল, একটা সূর্যোদয়ের আশায়
আপনারা বারবার মাহফিলে যাচ্ছেন,
হয়ে উঠছেন ইতিহাসের দীর্ঘদেহী নিঃশ্বাস এক।
শহরের কালো রাজপথ রক্তাক্ত সে অনেক আগে থেকেই জানেন।
বৃথা মাংস ফেলে যাচ্ছেন কার আশায়?

শহরের উঁচু সারি নীচু জিহ্বা বাঁধাগ্রস্ত জংঘা।
স্তনমৈথুণ অথবা এংলো ইনকা জাতির জনক হা হা হা
করে হাসতে হাসতে এগুনো স্থুল স্থিরচিত্র যেখানে
আতিক আর হৃদয় বসে চা খাচ্ছে কবিতা ভাবছে লিখছে না কিছুই।
প্রেমের কবিতা দ্রোহের কবিতা বলে বলে ভাগাড়ে চলছে ভাগ।
মানুষ কেবলই মানুষ ভালো মন্দ বিশেষণ নাই বা জুড়লেন।
এত এত সব কবি হা হা কা রে
অথচ আমি হাহাকার লিখতে স্পেস দিয়ে বসি।
আমার কবিতা হয়না বলেই আমি চেয়ে রই,
আমার শব্দ বাক্যগঠন প্রণালীতে ভুল হয় বড়,
আমার ছন্দ মাত্রার জ্ঞান নেই, আমার আলো টানবার যোগ্যতা নেই
মিথ্যে ফেরেশতা মিছিল নেই সাদতের মতন,
আমি প্রীতির মতন বিখাউজ আঙুলে তুলে আনতে পারিনা নখে;
আমার নাকের ময়লা,
আমি প্রথমালো কবি নই তাই লেখাগুলো বিক্রি করে
ম্যাটসিলস চুষতে চুষতে বলতে পারিনাআজ বিক্রি হই,
সবাই চিনুক তারপর কবিতা লিখবো।
জানেন আমি একদিন রাত দুইটায়
ডাক দিয়ে ফেলি বিপদজনক মহিলাকে কারওয়ানবাজারে
পরদিন শিরোনাম রাষ্ট্রীয় স্তনে নিহত মিছে প্রতিবাদ প্রতিরোধ প্রতিঘাত
কবিতার জলাতঙ্ক!
যাক স্বস্তিতে মজহারের মাজহাব গোষ্ঠি।
স্বস্তিতে বরিশালে একজন মনিরুল মেরাজ যিনি একদিন কবিতা লিখতেন!
আপনারা তাহলে সবাই যার যার মতন চুপ করে থাকুন।।

যেভাবে ৯৫টা চুপ হয়ে গেছেন রাকিবুল হায়দার,
যেভাবে পাশ কাটিয়ে কবিতা, পত্রিকার নোটিশ লিখছেন মাহতাব তুহীন।
যেভাবে ব্যঙ্গ্ময় নিয়ে খাবি খেতে খেতে সাম্য লিখছে না, লিখছে না হয়ে যাচ্ছে সমালোচক অর্ক।
আর টুইটার টিউশনিতে রোবায়েত
পড়ে আছে উর্ণ ফণা তোলা গিটারের তারের মিউটেশন মিউট্যান্ট
মিলিশিয়া বাহিনীর তক্তপোশের খরপোষে।
যেভাবে অস্থিরতায় একজন মাহবুব ময়ুখ রিশাদ লাথি মারতে চেয়েও
শব্দ হবে ভেবে তাকিয়ে থাকে নগর উন্নয়নের চৌধুরী ফাহাদের দিকে।।

দেবু'দা আছেন বিন্দাস,
কবিতা-টবিতা ছোড় দে মেরে ভাইনকিবও ব্যস্ত। জয়ন্ত জিল্লু বারবার রেডিওলোজীর
কঠিন তত্ত্বে খুঁজে ফিরছে মুক্তির সনদ।
আচ্ছা যদি কোনও দিন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের কবরের মতন
বুদ্ধিজীবী বুদ্ধিবেশ্যারা হতশ্রী করে কবিতার জমিনলিখিয়ে নিলো
অনুভবের ওড়নায় কাল-পরশু কালপুরুষের অনুবাদে
আসমা অধরার শানিত বাক্যে আমার এপিটাফে-

ইহা সো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার...” ভাবুন তো...

সে সব কথা থাক
রাতে ঘুম ভালো হয়েছে
শাদা শার্ট গুজে দিয়ে
প্যান্টের ভেতর আমি সরকারি কর্মচারী,
প্রতিটা নোট থেকে তুলে আনি
চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে
ব্যাস আর কিছু নয়
ভুলে যান ভুলে যান 
মনে রাখুন, কেবল
কবিতা- ক্যালেন্ডারের বুকে এক মিথ্যে ধর্মযাজক।






শুভা
জানো শুভা, পাখিদের কোনও দেশ নেই,
নেই কাঁটাতারের তারকাটায়বিদ্ধ যিশুখ্রিষ্টের মানচিত্র।
নেই সোডমের আপেল কামড়ে ধরা জমজ নিষিদ্ধ শহর!

তবুও,
আমাদের ডানায় জুড়ে দেয়া সরকারী সিলমোহর,
তবুও,
আমাদের পাসপোর্ট জুড়ে পায়ুপথের নানান চুক্তি,
অথচ,
আমরা মায়েদের রান্নাঘরে আলাদা করে ফেলি ধর্ম,
অথচ,
আমরা বাবাদের পেনশন সময়ে নীল ছবির মাদকে
বৃথাই চেঁচাই বিপ্লব বিপ্লব বলে,
অথচ,
আমরা প্রেমিকার উরুতে শুয়ে লুকিয়ে ফেলি ইশতেহার যত।
অথচ,
ভাজাপোড়া পেপটিক এসিডের টক-ঢেকুরে
একদিন আমাদের পথ চলাতে
তুমি ধরতে পারোনি রাষ্ট্রীয় খেলা, তুমি বুঝতে পারোনি শুভা।

আমার বুকের গহীনে জেগে ওঠা যত চোখ,
উটের গ্রীবার মতো,
নির্মীয়মাণ নির্লিপ্ততায় লেখা,
তোমার কাছেই কেনো গোপন করা সব কবিতা?
তোমার অযথাই আজকাল আমার উচ্ছন্নে যাওয়া চিন্তাগ্রস্ততা
আমাকে যে
সদ্য বিধবার নিস্তব্ধতায় গ্রাস করে ফেলছে
এটা কি বোঝো?
এটা কি বোঝো কেঁপে ওঠে থেকে থেকে রোদহীন
তাপহীন উত্তাপের একহাজার সতেরোর সন্ধ্যেতে
সিনেমার রুপালী তারে ঘিরে ধরা শরীর
আর একুরিয়াম ধরে রাখা সমুদ্রে অর্থ নিয়োগের সামাজিকতায়
রাষ্ট্র তোমাকেই কেনো বেছে নিলো?

একদিন
যাকে রাষ্ট্রের ন্যায় ভালোবেসে অর্ধাসনে বিয়ে করে ফেলেছিলে,
সংবিধানের মতন কখনওই
যার চার-ছয় লাইন কবিতাও তুমি তাকে শোনাতে পারো নি।
এ ব্যর্থতা চাপা দিতে আমি যে বারবার ক্রমাগত শুকিয়ে যাওয়া পদপিষ্ট
গোলাপের ন্যায় চীৎকার করে বলেছি
শুভা আমার কবিতার রাষ্ট্র!”
বুঝতে কি পেরেছিলে?
শুভা, আমার রক্তে নেচে ওঠা ভগবান
কলমে জেগে ওঠা হৃদপিন্ড
বারবার চব্বিশ মাসে ঘটানো তোমার অর্বাচীন রক্তক্ষরণেও
গেয়ে উঠেছে ভালোবাসার দগ্ধতেপান্তর,
জগদ্দল পাথর সরিয়ে।
তাও তুমি শান্ত হও না,
কলমের বদলে ধরিয়ে দেয়া বাজারের ফর্দে
তুমি গণতন্ত্রবাদী হয়ে উঠছো কেবল।
শুভা দ্যাখো,
পাঠ্যবই জুড়ে দুই যোগ দুই এর খেলা,
ধর্ম আচ্ছাদিত পতাকায়
ছিঁড়ে ছিবড়ে খাওয়া পত্রিকার মানবাধিকার আর
বারোহাত শাড়ির নাভী ঘিরে যে
বিন্দুগামী মেঘ
সে মেঘে রাষ্ট্রের বিলাসিতায়
সামাজিক উচ্ছন্ন মাস্তানির মস্তিষ্কে
তোমারই ছায়ায় নেচে উঠে
আজকাল তোমার প্রয়াত স্বামীর বিগত ভেন্টিলেশনের কবি জীবন।।



অর্থনীতির ছাত্র
নাভী থেকে একটু গড়ালেই ঢালু পথ...
বিপননযোগ্য প্রজননে,

তুমি নামতে নামতে... নামতে; থামবে কোথায়?



বাবা
তলিয়ে যাচ্ছে সিন্ডারেলা, আগুনমুখা নদী, বাবার রাজহাঁস।
তলিয়ে যাচ্ছে নিপল আর টিটস,
পায়ে পায়ে হারাচ্ছে...
রিসিপশন, জেনারেল ওয়ার্ড, লেবার ওয়ার্ড।।
আমি শব্দটা ধ্বসে পটে আকা অস্থিরচিত্র... বড্ড বেশী ফ্লোটিং...
বাবা আমার,ভুল করেননি কখনো।
বাবা আমার, সিদ্ধান্তগুলো সব নিয়েছেন দারুণ!
এই যে দুই হাজার সতেরোর উনিশে জুন, বেলা দুটোয়

আমাকে নিজ হাতে খুন করে কবিতা লেখার দায়ে,
লাশ পুতে দিয়ে বাড়ির পাশে আমগাছটার পেছনে,

হয়ে উঠলেন বাবা আমার, মুক্তিদাতা ঈশ্বর!
আর কতদিন, আর কত রাত উনি দেখবেন ওনার পুত্রের জীবন্মৃত ছাই?
এরচেয়ে বরং আমগাছটা পশ্চিমের মাটিটা উর্বর হউক।।




বিপন্ন বিড়ালচোখ
প্রেমিকার বুকে থাকা পদ্ম ফুলে নাক ঘষতে ঘষতে
আমি কেবল শত বৎসরের বিগত কিংবা আগত
আবহাওয়া বার্তাটাই পাই, আর কিছু নয়।
এখানেই হয়ত জানলার শিকে আটকে পড়া যেতো!
অথচ... শ্লোকের ছটায় বিড়বিড় করতে হলো

এইসব বৃহস্পতিবার দুপুর মেঘের সাথে লুটোপুটিতে
ছেনাল রোদের দুপুর আমার ভেতর আমাকে,
তোমার ভেতর আমাকে সাংবিধানিক অথচ লাস্যময়ী
বিপন্ন বিষাদে ডুবিয়ে রাখা ছাড়া আর কি ই বা দিতে পেরেছে বলো।

আগে এইতো অল্প কিছুদিন আগেই, ভেবে দ্যাখো-
সমস্ত পৃথিবী আড়াল করে তোমার গালের তিলটাতে
চুমু খেয়ে আমি একটা পথ হয়ে গিয়েছিলাম।
হয়ে গিয়ে ছিলাম পাখি,
তোমার বুকের আকাশে এক কিংবদন্তী পাখি!

মনে আছে?
নাকি তুমিও অপদার্থ একাডেমীর মতন পৃথিবীর
বুক থেকে সকল দীর্ঘ চুমু নিষিদ্ধ করবার পাঁয়তারায়
মুছে দিয়েছো অভিধান থেকে “ঈ”!
তাই হয়ত শোকপ্রস্তাবে,
অনুচ্চারিত থেকে যায় নিকোটিন আর পেন্সিল হিল।
তাই হয়ত মন খারাপের দুপুরবেলায়
তোমার চোখের ভেতর চোখ হয়ে কাঁদতে পারিনা।
তাই হয়ত বুঝতে পারো নি
দূরত্ব বলে কিছু নেই, শুভা।
ব্যক্তিগত বিছানা বলে কিছু নেই,
মর্গের ড্রয়ারে শুয়ে থেকে
জেগে উঠা তোমার চোখের ভেতর বুক হয়ে,
একটা আপাদমস্তক মিথ্যা।
পরিচয়হীন ভাষান্ধ রিমোটের উঁচু বোতাম খুলে
পৃথিবী আমাকে চিনতে পারছেনা
চিনতে পারছেনা, ততক্ষণ!
যতক্ষণ তুমি ফুঁপিয়ে কেঁদে না ওঠো তোমার
প্রেমিকের লাশ সনাক্ত করণে!
এটা ধরে নাও তোমার দাবা খেলুড়ে মস্তিষ্ক জাত
ভুলে যাওয় গত জন্মের শোকসভা।
যেখানে আমি , জুতার ভিড়
খুলে রাখা জুতার ভিড়ে আমিও ছিলাম!!

কেবল জিজ্ঞাসা করা হয়নি তোমায়,
কেমন আছো সরিয়ে বোতামের মিথ অথবা বিশ্রামের ক্রিয়াপদ?






কবি মূলত ষাট পয়সার অপয়া জীবন
ষাট পয়সার নিউজপ্রিন্ট কাগজে লেখা কবি’র প্রতিবাদে
গণিকাবহুলতার গণতন্ত্রে রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে যায় উচ্চতায়, অথচ
কবি, কবি’র দাঁড়ানো হয়না সমাজে!
মাথা হেট ঘরময়তার আলনায়
কবি ভুলে যায় কবে খেয়েছে ভাত পরিবারে,
কবে হেসেছে প্রাণখুলে?
কবে কবে?

বাবা মাথা হেঁট, বাজারে যায়
মা করে সেলাই; কবিপুত্র জন্মের কষ্ট।
প্রতিটি কুকুরের চারপেয়ে হাঁটাহাঁটিতে
কবি ভুলে যায় বোন কবে দিয়েছিল শেষ পরিচয়?

সন্ধ্যার সিনেমাহলে
প্রেমিকা বলে গেছে যাবার সময়
উঠতে পারলে ষাট পয়সার কাগজ থেকে দেখা করে অন্তত
বিয়ে খেয়ে যেও পরবর্তী স্বয়ম্বর সভার।

লাস্যময়ীতা আর কটাক্ষ বিলাস বালিশে চেপে
কবি বসে থাকে রোদ জর্জর চোখে, মশাল জ্বলা বুকে।
চায়ের দোকানের খিস্তি-খেউরে অথবা তীব্র আর্তনাদে।
শহর গড়ায় সভ্যতায়।

রাষ্ট্র দাঁড়ায় বিনির্মাণের উন্নয়নে,
কবি দাঁড়াতে পারেনা,
কবি হাঁটতে পারেনা বুকে ব্যাথা খুব।
কবি’র আঙ্গুলে দাঁড়ানো পতাকা উপহাস করে,
কবি বাড়ি ফেরে না; ঘর হারানো লোকমুখে শোনা কালো কৌতুকে।
রাস্তায় মাঝে দ্যাখা হয় কিছু ফেরিওয়ালা,
কায়কাওসের ছেলে অথবা বিব্রত ময়ূরের সাথে।
দ্যাখা হয় বেনিয়া বেশ্যাদের উর্বর স্তনবাহী অনুর্বর
যোণীনির্ভর মেদের সাথে।
দ্যাখা হয় ধর্ষক কবিতার পুরস্কার নেয়া একুশের স্মরণসভা।
দ্যাখা হয় কুকুরের পা তুলে পেচ্ছাব করা নষ্ট আয়োজিত কবিতা উৎসবের।

সামরিক কোলাহলের বেসামরিক পদযাত্রায়
এত কিছু দ্যাখতে দ্যাখতে দ্যাখা হয়না,
কবিপিতার মলিন মুখ,
কবিমাতার বিষণ্ন চোখ,
বোনের ভেজা আঁচল,
প্রেমিকার ন্যায্য অবহেলা।

কবি বাড়ি ফেরে না,
কবি মিছিলে যায়, মিছিলে ঘুমায়।

বাবা জেগে থাকে।
জেগে জেগে আওড়ান-
কবিপিতারা মারা যান সন্তানের প্রথম কবিতায়।
কবি’মাতাদের আত্মহত্যার কারণ প্রথম শ্লেটে লেখাঅ।

তবুও দেখুনদেখুন তো একবার এত এতবার সামাজিক ধর্ষণ
আর বেওয়ারিশ মৃত্যুর পর
তবুও কি থামে কবি, থেমেছে কি কখনও?

জনতার আগুন কলমে নিয়ে অধিকারের দাবীতে লেখা ফেস্টুন,
প্রেমিকার ওড়নায় আদায়কৃত নামাযের কারণে ব্রাত্য সে
সামাজিক সাপ্তাহিক বাজারের ছোট ফর্দে
তবুও থেমেছে কি কখনও মহানায়ক!

শোকে তাপে কবিপুত্র জন্ম দেয়ার অথর্বতায়
কবি পিতারা কবি জন্মের অভিশাপে বন্ধ করেছেন যৌনক্রিয়া
কবি মাতারা রুদ্ধ করেছে পথ জরায়ুর।
তবুও কিছু কি এসে গ্যাছে কবিতার?

আর তাই
জনশ্রুতি আছে একজন কবি’র ,
একজন মহানায়কের লাশ ঈশ্বর অগ্রাহ্য করেছে সহস্র বছর আগে।
জনশ্রুতি আছে পচে গলে যাওয়া,
কবি মৃতদেহ হয় দূর্দান্ত জৈব সার।



মূলত কবিতা

মূলত কবিতা একটা মিছিল যা দৈর্ঘ্যে নয় বাড়ে প্রস্থে!



No comments:

Post a Comment