কালের পাণ্ডুলিপি
দিনের গল্প
লিখতে গেলেই।
রাতের অক্ষর
ভিড় করে দরোজায়;
অমানিশার
উদরে হাসি?
অশ্রুর
আলপনা চোখের পাতায়।
মাঠের বুকে—
রূঢ় মনে
ফাঁদ পাতে নিষ্ঠুর মহাজন।
রক্তাক্ত
শালিক,
নিহত সারস—বক;
হাড়গিলে,
পানকৌড়ি শব্দহীন,
পৃথিবীর
বুকে কেউ যেন নয় আপন!
পুকুরের
জলে—
শোলটা দাপুটে
দাম্ভিক আস্ফালনে।
আক্রান্ত
পুঁটি—চেলা,
সন্ত্রস্ত
খোলসে টাকি;
রুই—কাতলারা
নির্লজ্জ নীরব,
নিমগ্ন
জীবন যত স্বার্থের আচ্ছাদনে।
সাপের দলে,
অবাধ স্বাধীন
বিবেকহীন স্বৈরাচার।
অসহায় ব্যাঙের
দল,
অসহায় ইঁদুরের
কুল;
চশমাটা
খুলে দেখে না তা বেজি,
বাতাসে
বয় নীরবে করুণ হাহাকার!
পৃথিবীর
পথে—
মানুষের
ছায়ায় শ্বাপদের কোলাহল;
মাটিতে
রক্তের দাগ,
কালের ভাগাড়ে
লাশ;
মানচিত্রের
ঘরে রাষ্ট্রের গাঢ় ঘুম,
বিধ্বস্তের
কাহিনীতে সভ্যতা বিহ্বল।
আলোর গল্প
লিখতে গেলেই
অন্ধকার ঋষিবর উন্মুক্ত আঙিনায়;
হাসি-আনন্দ
মৃত্যু যাত্রী—
বেদনার
হিমঘরে, শোকার্ত শয্যায়।
রহস্য বলয়
ক'টা
ডিম নিয়ে কাল অব্দি যে পাখিটি ছিল এডিসন, আজ সে খাবার সন্ধানে; আকাশ অপেক্ষায় নতুন
এক অতিথির।
খড় গাদার নিচে বেশ কটা বাচ্চা বিয়োল কুকুরী; অগোছালো বইয়ের স্তূপে কচি আরশোলার দাপাদাপি; বানর শুমারিতে সংকেত—সরল
বৃদ্ধির।
ফলের বিচিটা পড়েছিল মৃত্তিকায়; হঠাৎ নতুন চারা—পৃথিবীর বুকে নতুন গুল্ম, বৃক্ষ—মাথার উপর অগ্নিময় রোদ, বাজখাঁই ঝড়,
নিষ্ঠুর বজ্রপাত—অস্থির,
অধীর।
ও
পাড়ার মফিজের ঘরে, আজ এলো অন্ধ শিশু; ডোমের বাড়িতে বিকলাঙ্গ; মুচির আঙিনায় ফুটফুটে
চাঁদ; মিশেলের প্রাসাদে নতুন বধির।
আমি
স্বর্গ দেখিনি—শুনেছি কাহিনী; আমি দেখেছি পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, বৃক্ষলতা, বিকলাঙ্গ—বধির; আমি দেখেছি জীবন সান্নিধ্যে
কর্ম পরিধির।
আমি
আজ প্রবৃত্ত আপন সংযমে, শুদ্ধতার খোঁজে—দিন-রাত, বারো মাস—প্রশান্ত, স্থির।
শব্দ বিষয়ক
ভাষার শব্দ
শব্দেরও আছে ভাষার রঙিন বাড়িঘর;
শব্দের ছোঁয়াতে বাণী, জীবন্ত—মনোহর।
শব্দের খেলায়
দিন যায়, রাত যায়—
বহমান নদীর স্রোতে, জোনাকি পাখায়;
তবুও অবাক সারাবেলা—
শব্দের বাহারি রঙের বিচিত্র মায়ায়।
আমি দেখেছি,
বানানে অভিন্ন ‘হরি’
অথচ বুকে তার পদ্ম, ব্যাঙ, সাপ, জল…
শয্যাতে ‘সঙ্গম’ গুপ্তবীজী,
সাগরে আবার ডানপিটে কোলাহল।
‘মরে যাব’—
এই যে শব্দ যুগল
কখনো খুশি, কখনো ব্যথার সাতকাহন;
‘পাগলে’ মেজাজে আগুন,
কখনো আবার পাগলেই নাচে মন।
পাত্র ভেদে
ভালবাসার শ্বাশত রঙ
পানি পীরের আশ্চর্য নিবিড় অনুসারী;
চুম্বনের নরম কোমল ঠোঁটে
অপার স্নেহ, গভীর প্রেম রকমারি।
একটি হাসি
কী বিচিত্র রূপ তার;
এই প্রেরণার ফুল, এই তো ঘৃণার মুকুল;
গঠনে রঙে জ্যামিতিক সর্বসম
তবুও বিস্ময়কর বহুমুখী কালো চুল।
কারো বুক, চোখ,
পদ্মাভ নাভি, রক্তকমল ঠোঁট
রক্তকে করে নেশাতুর, কামুক ও মাতাল;
আমি বলি তাকে সংবেদনশীল
সমার্থক আবেদনময়ে হই না বেসামাল।
ভাষার শব্দ আছে,
শব্দেরও আছে বহুবিধ ভাষার ব্যাকরণ;
কথক-লেখকে হোক শব্দের শিল্পকরণ।
No comments:
Post a Comment