ওদের বাড়ির
পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া হানু গাঙটা বর্ষায় বেজায় খরস্রোতা হয়ে ওঠে। গ্রীষ্মের শুকনো নদীটা বর্ষায় এমন যৌবনবতী
হয়ে উঠতে পারে তা বিশ্বাসই করা যায় না। বর্ষাকালে
সুমিতের মায়ের পুজোর বাসি ফুল ভাসতে ভাসতে টিউলিদের বাড়ির ঘাটে গিয়ে ঠেকে। টিউলি তাদের গাঙের ঘাটে বাসনকোসন ধুতে
এলে ভেসে আসা ফুলগুলো দেখেই বুঝতে পারে ওগুলো সুমিতের মায়ের পুজোর বাসি ফুল। সুমিতরা এক ভাই এক বোন। রঞ্জনা সুমিতের বোন, সে সুমিতের ছোট, তাই সবাই ওদের মাকে রঞ্জনার মা
না বলে সুমিতের মা বলেই থাকে।
টিউলি রঞ্জনার
সঙ্গে ক্লাস টেনে পড়ে। স্কুল ফাইনাল দেবে ওরা দু’জনে, অন্যদিকে সুমিত বিজ্ঞান নিয়ে টুয়েলভ ক্লাসে পড়ছে। রঞ্জনা আর টিউলি সুমিতের চেয়ে বছর তিনেকের
ছোট।
আশ্বিনের মাঝামাঝি
থেকে হানু গাঙের জল শুকাতে থাকে। কার্তিক
শেষ হতে না হতেই হানু গাঙের জল হাঁটু সমানে গিয়ে ঠেকে। নৌকা চলাচল বন্ধ হলে পাড়ার ছেলেরা মরা হানু গাঙে যার
যার পাড়ায় বাঁশের সাঁকো দেয়। এপাড়ে ওপাড়ে যাতায়াতের জন্যে পাড়ার
মাঝামাঝিতে সুমিতরা সাঁকো বানায়। তখন
আর এ পাড় থেকে ওপাড়ে যেতে নৌকার দরকার পড়ে না।
মা, বাবা আর ছোট একটা ভাইকে নিয়ে টিউলিদের একটা ছোট সংসার । ওর ভাই অরিন্দম সামনের বছরে ক্লাসে সিক্সে
উঠবে। টিউলির বাবা ঢাকার
একটা সদাগরী অফিসে কাজ করে। মাসে
দু’বারে বেশি তার পক্ষে বাড়ি আসা সম্ভব হয় না। বর্ষা এলে মাসে একবারও অনেকক্ষেত্রে তার পক্ষে বাড়ি
আসার সম্ভব হয় না। ওটাওটা
কিনাকাটা করতে টিউলির মাকে অন্যেই উপর ভরসা করতে হয়। টিউলির মা ভাবে, অরিন্দম আর
একটু বড় হলে তাকে আর অন্যের উপর ভরসা করে থাকতে হবে না।
বর্ষাকালেই টিউলিদের
বেশই অসুবিধায় পড়তে হয়। তাদের
পাড়ায় নৌকা আছে মাত্র দু’জনের। টিউলি ভাবে, রঞ্জনাদের তালের ডোঙা
না থেকে যদি একটা নৌকা থাকতো কী মজাই না হতো! তালের ডোঙা সবাই
চালাতে পারে না, এমন কি সবাই ওতে বসে থাকতেও পারে না। রঞ্জনা কিন্তু ভালই তালের ডোঙা চালাতে
পারে। টিউলি ওটা চালানো
দূরের কথা বসে থাকতেও পারে না। তালের
ডোঙায় চড়লে ওর নাকি মাথা ঘোরে।
ছুটির দিনে একদিন জোর করেই রঞ্জনা টিউলিকে তালের ডোঙায় চড়িয়ে বেতাল অবস্থায়
পড়েছিল। টিউলি বারবার নড়াচড়া করায় ডোঙাটা উলটে যাওয়ায় তারা দু’জনেই গাঙের জলে
পড়ে যায়। রঞ্জনা সাঁতরে কূলে উঠে দেখে টিউলি জলে মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। টিউলিকে টেনে তোলার
জন্যে জলে ঝাঁপ দেবার জন্যে মাজায় ওড়না জড়িয়ে নিয়ে প্রস্তুত হতে গিয়ে দেখে সুমিতদা
ডুব সাঁতার দিয়ে টিউলিকে জাপটে ধরে উপরে তুলে আনছে। সে সময় সুমিতদা ঘাটে
স্নান করতে নামছিল। সুমিত আর রঞ্জনা পিঠেপিঠে ভাইবোন, ওদের মধ্যে
খুনসুঁটি লেগেই থাকে।
সুমিত বোনকে ঠাট্ট করে বলে- রঞ্জনা,
তুই এত বড় সাঁতারু আর তোর বন্ধুটি...।
-আমার বন্ধুটি কী?
-দুধ ভাতের সঙ্গে পিঁপড়ে খেলে সাঁতার শেখা যায়, টিউলি হয়তো তা জানে না।
ওকে রঞ্জনার দাদার উপর রাগ দেখিয়ে বলে- তুই কেন আগ
বাড়িয়ে ওকে জাপটে ধরে জল থেকে তুলতে গিয়ে্ছিলি, আমি কি তাকে
টেনে তুলতে পারতাম না?
-তুই ওকে জল থেকে টেনে তুলতি! ওকে জল থেকে টেনে
তোলা আমার ঘাট হয়েছে, এখন তোর
কথা শুনে মনে হচ্ছে।
-তুই কেন ওকে কেন জাপটে ধরে টেনে তুললি আমি জানি না!
-জানিস বেশ ভাল।
-টিউলি সাঁতার জানে কিনা তোকে আমি দেখাবো কিন্তু দু’চারদিনের মধ্যে।
রঞ্জনা কিন্তু
জানে টিউলি ভাল সাঁতারাতে পারে না। সে
মনে মনে ভাবে, যে করেই
হোক টিউলিকে সাঁতার শিখাতেই হবে।সে
টিউলিকে বলে না তাকে নিয়ে সুমিতদার ঠাটা তামাশার কথা। সে তাকে বলে - টিউলি তুই একেবারেই
সাঁতার জানিস না তা কিন্তু নয়, তবে সেদিন না সাঁতরিয়ে জলে
হাবুডুবু খাচ্ছিলি কেন, হয়তো সুমিতদাকে দেখতে পেয়ে তুই ডুবে
যাওয়ার ভান করেছিলি, তাই না? টিউলি
তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মিটমিট করে হাসতে থাকে।
পরের সপ্তাহে
ছুটির দিনে রঞ্জনা সাঁতার দিয়ে টিউলিদের ঘাটে এসে টিউলিকে ডাকতে থাকে। ডাক শুনে টিউলি ঘর থেকে বের হয়ে এলে রঞ্জনা
বলে-
টিউলি, আজ থেকে আমি তোকে সাঁতার শেখাবো,
দেখি দাদা কীভাবে বলতে পারে তুই সাঁতার জানিস না। রঞ্জনার কথা শুনে টিউলি মুচকি হেসে বলে- তোর দাদা বললেই হলো আমি সাঁতার জানি না।
-তুই যদি সাঁতারই জানবি
তবে কেন তোকে দাদা জাপটে ধরে তোকে জল থেকে উপরে উঠালো। টিউলি তার বান্ধবীর কথার জবাব দেয় না।
টিউলিদের বাড়িতে
সুমিতের অবাধ যাতায়াত ছোট্টবেলা থেকেই। টিউলির
মা এটাওটা কিনবার জন্যে প্রায় প্রায়ই সুমিতকে খবর দেয়। শুকনো মৌসুমে সুমিতের সঙ্গে টিউলির মায়ের যোগাযোগ করতে
অসুবিধা হয না। অরিন্দমের
বাচ্চা বয়সে মা সুমিতকে খবর দিতে টিউলিকেই পাঠাতো। অরিন্দম একটু বড়সড় হয়ে একটু বুঝতে শিখলে টিউলিকে না
পাঠিয়ে অরিন্দমকে পাঠাতো।
টিউলিকে জল থেকে
জাপটে ধরে টেনে তোলার পর সুমিতের মনে কেন যেন এক ধরনের শিহরণ বয়ে গিয়েছিল। পর মুহর্তেই সে শিহরণের কথা ভুলে যায়। রাতে বিছানায় যাওয়ার পর দুপুরের ঘটনাটা
সুমিতের মনে কোণে ভেসে উঠে। তার
নিজের ছোট বোন রঞ্জনা কেন বললো-তুই কেন ওকে কেন জাপটে ধরে টেনে
তুলেছিলি আমি জানি না!
সুমিত বুঝতে পারে
রঞ্জনা আর টিউলি আজ আর ছোট্টটি নেই। দু’জনেই ক্লাস টেনে পড়ে, আজ আর ওদের ছোট্ট থাকবার
কথা নয়। সে
কিন্তু আজও রঞ্জনা ও টিউলিকে একই দৃষ্টিতে দেখে। নিজের বোন রঞ্জনা ও তার বান্ধবী টিউলি শরীর ও মনে বেড়ে
উঠেছে তা তার ছোট বোন রঞ্জনার
কথায় উপলব্ধি করতে পারে। সুমিতের
চোখের সামনে জলে ভেজা গায়ের সঙ্গে লেপটে থাকা জামার আড়ালের টিউলির শরীরটার ছবি ভেসে
উঠে। জলে ডুবে যেতে
থাকা টিউলিকে বাঁচানোর জন্যেই সে তাকে জল থেকে টেনে তুলেছিল, অন্য কোন চিন্তার তার মনে সে সময় জায়গা করে নেওয়ার কোন প্রশ্নই ছিল না। আজকের দুপুরের ঘটনা সুমিত মনে রাখতো না, যদি তার
নিজের ছোট বোন রঞ্জনা তাকে ওই ভাবে কথা না বলতো।
সুমিত ভাবে, টিউলিকে সে দেখে আসছে ছোটবেলা থেকে, রঞ্জনার সাথে
ও পুতুল খেলতো; রঞ্জনার সাথে সাথে টিউলিও তার কোলে চড়তো। তখন ওদের মুখে কেবল কথা ফুটছে, সরস্বতী পুজোয় হাতেখড়ি দেওয়ার পর সুমিত সবে প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হয়েছে।
দিনের পর দিন
গড়িয়ে যায়, টিউলি ও রঞ্জনা একটু একটু করে বড় হয়ে ওঠে। এক সরস্বতী পুজোয় ওরাও হাতেখড়ি দিয়ে প্রাইমারী
স্কুলে ভর্তি হয়। টিউলি, রঞ্জনা সুমিতের সঙ্গে স্কুলে যায়। রঞ্জনা ও টিউলি ক্লাস থ্রিতে ওঠে, আর সুমিত ক্লাস ফাইভ পরীক্ষায় উর্ত্তী্ন হয়ে হাই স্কুলে ভর্তি হয়।
টিউলি ও রঞ্জনা
থেকে যায় প্রাইমারী স্কুলে। গ্রীষ্ম
গিয়ে বর্ষা আসে, হানু গাঙে গড়াই নদীর জল পড়ে, শ্রাবণ আসতে না আসতে হানু গাঙ জলে ফেঁপেফুলে ওঠে। ভাদ্র মাসের ভাদুরে ষষ্ঠীপুজোয় ব্রত পালন
করে মায়েরা। পুজোর
শেয়ে কলার গাছের খোলায় ঝিঙের চাকচাক করে কেটে তার উপর চালের পিঠুলিতে সিঁদুর মাখিয়ে
পাড়ার ছেলেমেয়েরা কলার খোলা নৌকা গাঙের জলে ভাসিয়ে সুর করে সবাই একসুরে ছড়া কাটে- নৌকা যায় ভেসে, মামা আসে হেসে।
রঞ্জনা আর টিউলি
পাড়ায় তাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের সাথে কলার খোলার নৌকা ভাসাতে মজা পায়। ছোট থাকতে সুমিতও রঞ্জনাদের সাথে কলার
খোলার নৌকা ভাসাতো ভাদুরে ষষ্ঠীপুজোর দিনে। এখন
আর সে রঞ্জনাদের কলার খোলার নৌকা ভাসাতে যায় না,কারণ তখন আর
সে রঞ্জনাদের মতো ছোট্টটি নেই। তবে সে সময় ভরা ভাদরের গাঙের জলে ছুটির দিনে সুমিত তার বয়সী ছেলেদের
সাথে গাঙের জলে সাঁতার কাটতো , খেপলা জাল ফেলে বন্ধুরা মিলে
মাছ ধরতো।
রঞ্জনা টিউলিদের
সঙ্গে কলার খোলার নৌকা ভাসাতে না পারলেও সুমিত কিন্তু তার বন্ধুদের সঙ্গে কাগজের নৌকা
তাদের গাঙের ঘাটের জলে ভাসিয়ে মজা পেত। সুমিত
তার বন্ধু শোভন, শিপন আর রাজনের সাথে কাগজের নৌকা বানানোর জন্যে কাগজ,
রঙ পেন্সিল ,দেশলাইয়ের বাক্স, আটা, কঁচি আর পাঠকাঠি নিয়ে বসতো।
এ নিয়ে টিউলি
সুমিতের বোন রঞ্জনাকে ঠাট্টা করে বলতো, “তোর দাদা এখন আগের
মতো আমাদের সঙ্গে কলার খোলার নৌকা ভাসাতে আসে না কেনরে, রঞ্জনা?”
“তা আমি কী করে বলবো,
তুই আগের চেয়ে বড় হয়ে গেছিস্ বলে হয়তো তোর সঙ্গে কলার খোলার নৌকা
জলে ভাসাতে লজ্জা পায়, হয়তো।”
“হয়তো তাই!তবে তোর দাদা একদিন একজন বড় শিল্পী হবেরে, রঞ্জনা।” রঞ্জনাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টিউলি
আবার বলতে শুরু করে,“ তোর দাদা সুন্দর সুন্দর কাগজের নৌকা
বানিয়ে জলে ভাসাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে তোর দাদা ভবিষ্যতে একজন বড় শিল্পী হবে। রঞ্জনা, তোর দাদা কিন্তু
জানে না তার কাগজের নৌকাগুলো কোন ঘাটে ভেড়ে।”
“টিউলি, তুই আমার দাদাকে নিয়ে এত কিছু ভাবছিস্ দেখে আমার ভয় হচ্ছে তুই একদিন দাদার
প্রেমে পড়ে না যাস্” রঞ্জনা হেসে টিউলিকে বলে।
বর্ষা এলে টিউলিদের
মা সংসারের টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনতে বেশ অসুবিধায় পড়ে। টিউলির বাবা বাড়ি থাকলে তো কথাই ছিল না। জল ভেঙে টিউলির পক্ষে বাজারঘাট করতে যাওয়া
সম্ভব হয় না। অরিন্দম
বেশিই ছোট, বারোয়ারি নৌকায় তাকে গাঙের ওপারে সওদা আনতে পাঠাতে
টিউলির মা সাহস পায় না। তার
একমাত্র ভরসা রঞ্জনার দাদা সুমিত। কলেজ
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সুমিত টিউলিদের বাড়িতে আসে। টিউলির মাকে সে মাসিমা বলে ডাকে।প্রত্যেক ছুটির দিনেই সুমিত টিউলিদের বাড়িতে
আসতে পারে না তাদের বাড়ির সাংসারিক কাজ কিংবা খেলাধুলোর জন্যে। স্কুলের ক্রিকেট টিমের সে একজন চৌকশ খেলোয়ার, আবহাওয়া ভাল থাকলে তাদের স্কুলের মাঠে ছুটির দিনে সুমিত ক্রিকেট খেলার প্রাকটিশে
অংশ নেয়।
ছুটির দিনে সুমিত
তাদের বাড়িতে এলে টিউলির মনটা কেন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। তার মন চায় রজ্ঞনাদের বাড়িতে ছুটে যেতে। টিউলির মায়ের অনুরোধে সেদিন ছুটির দিনে
সুমিতের টিউলিদের বাড়িতে আসার কথা ছিল। কিন্তু
কাজে আটকে গিয়ে সুমিত টিউলিদের বাড়িতে আসতে পারে না।
পরদিন স্কুলে
যাবার জন্যে সকাল সকাল নিজ নিজ গাঙের ঘাটে স্নান করতে আসলে টিউলি চিৎকার
করে বলে-
রঞ্জনা, সাঁতরে আমাদের ঘাটে আয় তো দেখি।
টিউলির কথা শুনে
রঞ্জনা চেঁচিয়ে বলে ওঠে
– জল থেকে ওঠ, টিউলি, জলে কুমির এসেছে শুনিসনি, পা ধরে টেনে নিয়ে যাবে কিন্তু!
কুমিরের নাম শুনে টিউলির মনে একটু একটু ভয় হলেও মুখ ফুটে কিছু বলতে চায়
না। সে তাড়াতাড়ি জলে কয়েকটা ডুব দিয়ে মাথা তুলে রঞ্জনাদের গাঙের ঘাটের দিকে
তাকিয়ে রঞ্জনাকে সেখানে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়। টিউলি ভাবে, রঞ্জনা কি তাকে
অবাক করার জন্যে জলে ডুব দিতে থাকাকালে সুযোগ বুঝে কেটে পড়েছে। সুমিতদাকে বলে ওকে বকুনি
খাওযাতে হবে মনে মনে বলে টিউলি আর দুটো ডুব দিয়ে উঠে পড়বে এমন সময় তার পা ধরে কিসে
যেন টান মারে। পা ছাডিয়ে নিয়ে টিউলি পড়িমড়ি করে জল থেকে উঠতে গেলে রঞ্জনা জলের ভেতর
থেকে ভুশ করে উঠে টিউলিকে জড়িয়ে ধরে বলে- কেমন ! ভয় পেয়ে
গেছিস দেখছি। তোর ভয় কাটাতে হলে তোকে একটা সাঁতার দিতে হবে। চল
টিউলির মুখ থেকে কথা সরে না। রঞ্জনা জানে টিউলি সাঁতার কাটতে
চায় না , তার উপর ও আজ পরে আছে শাড়ি ব্লাউজ। রঞ্জনা বলে- দাদা আজ ঘাটে
থাকলে কী মজাই না হতো! দাদা ঠিকই বলে, আসলেই তুই একটা ভিতুর ডিম।
-তোর দাদা! তার কথা আর আমাকে বলিস না! কাল তো সরাদিন মা- সুমিত এখনো এলো না, এলো না , এলো না বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে। তোর দাদা আসলেই একটা
মিথু—
টিউলি শব্দটা শেষ করার আগেই রঞ্জনা বলে উঠে-তোর মুখে দাদার নিন্দে!
-তোর দাদা তো সাধু পুরুষ, যেন ধোয়া তুলসি পাতা!
মেয়েদের দিকে চোখ তুল চাইতে জানে না, তাই
তো?
–তাই না তো কী! তোর মুখের দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছে
কোন দিন দাদা? তুই তো-
-আমি তো কী?
-
কাল তোদের বাড়িতে যায়নি, তাই তো তুই তাকে
মিথ্যুক বলছিস্, তাই না?
–রঞ্জনা, তুই কী সব আজেবাজে কথা বলছিস। টিউলি হেসে রঞ্জনাকে
বলে।
-
চল জল থেকে উঠি,স্কুলের বেলা হয়ে যাচ্ছে
। রঞ্জনাকে কথাটা বলে নিজেদের ঘাটে চলে আসবার জন্যে সাঁতার দিতে যাবার
আগে টিউলি বলে উঠে-
রঞ্জনা তোকে সাবধান করে দিচ্ছি, আমার সম্বন্ধে
কোন কথা তুই তোর দাদার কাছে বলবি না। আমার নামে ইনিয়ে বানিয়ে তুই তোর
দাদার কাছে লাগালে সে ভাববে ও আমাদের বাড়িতে না আসার জন্যে আমি তাকে দুষছি।
-এ সব কথা দাদাকে বলতে আমার বয়ে গেয়ে । কথা শেষ করে রঞ্জনা
সাঁতার কেটে নিজেদের ঘাটে ফিরে আসে। গাঙের ঘাট থেকে দেরি করে ফিরে আসায়
রঞ্জনার মা বলে–স্নান করতে এত সময় লাগে! তুই হয়তো এতক্ষণ টিউলির
সঙ্গে জলে দাপাদাপি করছিলি, তাই না?
–কে তোমাকে বলেছে আমি টিউলির সঙ্গে জলে দাপাদাপি করছিলাম? দাদাই হয়তো তোমাকে আমাদের সম্পর্কে লাগিয়েছে।”
“তোর দাদা বলতে যাবে কেন?”
রঞ্জনা আসলে জানে তার দাদা তাদের সস্বন্ধে কোন কিছু বলেনি। তার দাদা সুমিত কারো
সম্বন্ধেই কোন প্রকার নিন্দাবান্দা করে না। রঞ্জনা টিউলি সম্বন্ধে তার দাদার
মনোভাব যাচাই করার জন্যে পরদিন রঞ্জনা দাদাকে বলে,“ দাদা, তুই টিউলিদের বাড়িতে কাল যাসনি বলে ও তোর উপর বড়ই খেপে আছে।”
“ও কেন খেপে আছে? আমি তো ওর কথায় ওদের বাড়িতে যাই
না, যাই মাসিমার কথায়, আমি তো মাসিমাকে
খবর দিয়েছিলাম অরিন্দমের কাছে যে আমি যেতে নাও পারি ক্রিকেটের প্রাকটিস হলে।” সুমিত বুঝতে পারে না কেন টিউলি তাকে সহ্য করতে পারে না। সে ভাবে , আমি তো টিউলিদের
অমঙ্গলের কথা ভাবি না, তবে কেন ও কথায় আমার সমন্ধে রঞ্জনার
কাছে নানা কথা বলে।
সুমিত বর্তমানে তার নিজের বোন রঞ্জনার কথাবার্তার মধ্যেও যেন উল্টোপাল্টা
ভাব লক্ষ্য করে।
সুমিতের একটাই
লক্ষ্য যে তাকে বড় হতেই হবে। স্কুল
ফাইনালে সে খুই ভাল রেজাল্ট করেছে। হায়ার
সেকেন্ডারিতেও তাকে অবশ্য্ ভাল রেজাল্ট করতে হবে। তার ঠাকুরদার মৃত্যুকে আজো ভোলেনি, রমজান ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় তিনি মারা
যান। সে সময় সুমিত
খুবই ছোট,
তবে ঠাকুরদার মৃত্যুর কথা তার ভাল করেই মনে আছে। সুমিত বড় হয়ে সংকল্প করে যে সে একজন ডাক্তার
হবে। সুমিতের বাবা
মাও চান তাদের একমাত্র ছেলে ডাক্তারী পড়ে গ্রামের মানুষের সেবা করুক।
সুমিত এতটুকু
বয়সে প্রত্যক্ষ করেছে কত মেধাবী ছেলেমেয়ের পড়াশোনর ইতি ঘটেছে নিজেদের খেয়ালিপনায় অথবা
পরিবারের ইচ্ছাঅনিচ্ছার বলি হওয়ার কারণে।
সুমিতের সঙ্গে
পড়তো মাধবী নামে একটা আদিবাসী মেয়ে, স্কুল ফাইনালে মেয়েটি
তার চেয়েও ভাল রেজাল্ট করেছিল, কিন্তু তারপর আর পড়াশোনা চালিয়ে
যেতে পারেনি তার বাবামা ও পরিবারের কারণে। আগে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের মধ্যে পড়াশোন চল ছিল না বললেই
চলে,
আদিবাসীদের পাড়ার মাধবীদের পরিবার প্রথম পড়াশোনায় এগিয়ে আসে। মাধবীর দিদি সাধিকা স্কুল ফাইনাল পাশ করে
পালিয়ে গিয়ে অন্য সম্প্রদায়ের ছেলেকে বিয়ে করে, আর তাতে তাদের পরিবারের
মানসম্মান ধুলায় লুন্ঠিত হয়।
মাধবীও সাধিকার মতো তার ভালবাসার ছেলেকে বিয়ে করে ফেলে এই
আশংকায় ওর বাবা মা ওকে নিজের সম্প্রদায়ের অল্প লেখাপড়া করা এক দোকানদার ছেলের সাথে
বিয়ে দেয়। মাধবীর
পড়াশোনার ইতি ঘটে । সুমিত
এ ঘটনায় খুবই ব্যথিত হয়। মাধবীর
মতো অসাধারণ মেধাবী একটা মেয়ের জীবন নি:শ্বেষ হয়ে যাওয়ার সুমিত
কোন দিন ভাবতেও পারেনি। সুমিত
ভেবেছিল
, লেথাপড়া শিখে অবশ্যই মাধবী প্রতিষ্ঠা পাবে। মাধবীকেই একমাত্র সুমিতের ভাল লাগতো্, সে ভাল লাগার মধ্যে কোন প্রকার স্বার্থের নাম গন্ধ ছিল না। সুমিত যে তার আদিবাসী সহপাঠিনীকে মনে প্রাণে
ভালবাসতো তা রঞ্জনা ও টিউলি দু’জনেই জানতো। সুমিতা ও মাধবী তাদের স্কুলের শেষ ক্লাসে
পড়াকালে মাধবীর প্রতি সুমিতের দুর্বলতার কথা ঠারেঠোরে টিউলি প্রায় প্রায়ই রঞ্জনাকে
বলতো।
- রঞ্জনা, তোর দাদাটা উল্টোপথে চলছে, তুই কি তা বুঝতে পারিস
না। মাধবীদি
তোর দাদার চেয়ে পড়াশোনায় ভাল তা আমি মানি, তাই বলে সে আমার চেয়ে
কিন্তু সুন্দরী নয়, টিউলি রঞ্জনাকে বলে।
সত্যি কথা বলতে, টিউলি শরীর স্বাস্থ্য ও চেহারায় অপূর্ব্ ।
সুমিত বেশ কয়েকদিন
টিউলিদের বাড়িতে না যাওয়ায় টিউলির মায়ের চেয়ে বেশি অসন্তুষ্ঠ হয় টিউলি নিজে। সে রঞ্জনাকে আকারে ইঙ্গিতে তাদের প্রতি
সুমিতের এধরনের আচরণের জন্যে তার অস্বস্তির কথা ব্যক্ত করতে দ্বিধা করে না।
- তোর দাদাটার স্বভাবটাই
যে কেমন, একটা আদিবাসী মেয়ে তোর দাদার মনে ---
টিউলির কথা শেষ
করতে না দিয়ে রঞ্জনা বলে- দাদার নামে কী যা তা বলতে চাচ্ছিস্
, আমার চেয়ে তুই তো আমার দাদাকে বেশি চিনিস্ না। মাধবীর জন্যে দাদার মনে কোন দিনই কোন প্রকার
দুর্বলতা ছিল না ।
-তবে তোর দাদার মনটা
কার প্রতি-
রঞ্জনা এবারও
টিউলিকে থামিয়ে দিয়ে বলে–দাদার মনটা কার প্রতি দুর্বলতা তা আমি
কী করে বলবো! তবে এটা বলতে পারি, তোর প্রতি নয়।
– তোর দাদা আমার প্রতি
দুর্বলতা দেখালে আমি তা বরদাস্ত করবো, তুই ভাবতে পারলি কেমন
করে!
রঞ্জনা ভেবে পায়
না টিউলি কেন তার দাদাকে নিয়ে প্রায় প্রায়ই এত কথার অবতা্রণা করে থাকে। টিউলির প্রতি দাদার কোন মাথা ব্যথা নেই। তারা আজ কেউই ছোটটি নেই। তাদের সবারই ভালমন্দ বোঝার ক্ষমতা আছে। দাদা হায়ার সেকেন্ডারীতে ভাল রেজাল্ট করে
কমপিটেটিভ পরীক্ষায় উর্ত্তীন হয়ে এম.বি.বি.এস এ ভর্তি হয়েছে। টিউলি ও রঞ্জনাও বিজ্ঞান নিয়ে হায়ার সেকেন্ডারীতে
পড়ছে। তাদের দু’জনেরও আশা ডাক্তার হওয়া।
শারদীয়া দুর্গোৎসবের
ছুটি চলছে। সবাই
বাড়িতে,
টিউলির বাবা, সুমিত, সুমিতের বন্ধুবান্ধবরা সহ আরো কতজন। বিজয়াদশমী পরদিন টিউলির ভাই অরিন্দমের জন্মদিন। টিউলির বাবা বাড়িতে না থাকার কারণে টিউলির
মা অরিন্দম ও টিউলির তার জন্মদিনে
শুধুমাত্র পায়েস খাইয়েই ঘরোয়া ভাবেই পালন করে থাকেন। এবার টিউলির বাবা বাড়ি থাকায় অরিন্দমের বার্থ্ ডে একটু
আনুষ্ঠানিক ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিউলিরা। বেশ কয়েকদিন টিউলি ও অরিন্দম ঘরদুয়োর সাজাতে ব্যস্ত। অরিন্দম, টিউলির জন্যে আলাদা রিডিং রুম কাম বেডরুম, ড্রয়িংরম,
ডাইনিংরুম নতুন করে সাজিয়েছে তারা বেশ কয়েকদিন ধরে ।
পাড়ার পুজো নিয়ে
ব্যস্ত থাকায় ইচ্ছে থাকলেও সুমিত টিউলির মা বাবার সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেনি। কলেজ ছুটি তারপর পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত থাকায়
রঞ্জনার সঙ্গে টিউলির যোগাযোগ নেই। তবে
গত পরশু গাঙের ঘাটে স্নান করতে গেলে ওপার থেকে রঞ্জনাকে দেখে টিউলি চেঁচিয়ি বলেছিল – শুনলুম সুমিতদা বাড়িতে এসেছে, আমার সঙ্গে নয়,
মায়ের সঙ্গে তো একবারের জন্যে দেখা করতে আসা উচিত ছিল না ওর!
–টিউলি, দাদা বাড়ি এসেছে জেনে তোরও তো তার সঙ্গে দেখা করতে আসা কি উচিত ছিল না,
আমার সঙ্গে দেখা করতে আসার কথা বলেও তো তুই আসতে পার তি?
রঞ্জনার কথা শুনে
টিউলি রেগে আগুন হয়ে বললো- তোর দাদা কি বাঘ না ভালুক ! তার কথা বলতে ভয় কিসের, তোর দাদার সঙ্গে দেখা করতে
যাচ্ছি, একথা মাকে বলতে আমি কি ভয় পাই?
–তুই দূর থেকে আমার
সঙ্গে অযথা ঝগড়া করিস না। একটু
ঠান্ডা হয়। তবে
শোন,
আজ বিকেলে দাদা তোদের বাড়িতে যাবে, তাই বলে
ভাবিস্ না সে তোর সঙ্গে দেখা করতে যাবে, দেখা করতে যাবে মাসিমার
সঙ্গে।
দাদার প্রসঙ্গ
তুলে টিউলিকে রাগাতে রঞ্জনার মজা লাগে ভেবে সে তার কথা শেষ না করে আবার অন্য প্রসঙ্গে
বলে-
দাদার সঙ্গে আমিও তার সঙ্গে যাব, তুই কিন্তু
বাড়ি থাকিস্।
- তোর দাদা যখন আমার
সঙ্গে দেখা করবে না তখন আমার বাড়ি থাকা আর না থাকা একই কথা!
টিউলি রঞ্জনার দিকে বেজার মুখে একবার তাকিয়ে গাঙের ঘাট থেকে বাড়ির দিকে
হাঁটা দেয়।
সেদিন বিকেলে
সুমিত তার বোন রঞ্জনার সঙ্গে টিউলিদের বাড়িতে যায়। বেশদিন পরে সুমিত টিউলিদের বাড়িতে এলো। সুমিত টিউলিদের বাড়িতে ঢুকবার পথের দু’ধারের ফুলবাগান আর উঠোন এবং ঝিমছাম ঘরগুলো দেখে বিস্মিত হয়। অন্যদিকে, রঞ্জনা বিস্মিত হয় টিউলিকে সেজেগুজে তাদেরকে দিকে এগিয়ে আসতে দেখে।
- কেমন আসিস্,
টিউলি ? সুমিত টিউলিকে জিজ্ঞেস করে। প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষা না করে সে টিউলিকে
প্রশ্ন করলো –মাসিমা কোথায়?
সুমিতের গলা শুনে
রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলে সুমিত তাকে প্রণাম করে বললো- মাসিমা, কেমন আছেন?
– ভাল আছি, বাবা । তুমি
তো কয়েকদিন হলো বাড়ি এসেছো, কিন্তু ---
- বাড়ি এসে পুজোর কেনা
কাটার জন্যে শহরে যাওয়ায় আসা হয়ে ওঠেনি। সুমিত মাসিমার কথার মাঝখানে বলে উঠলো। - তা মেসোমশাই আর অরিন্দমকে দেখছিনা ।
- তারা বাজারে গেছে টুকিটাকি
জিনিসপত্র কিনতে।- টিউলি মা, সুমিত ও রঞ্জনাকে তোর রিডিংরুমে বসিয়ে
রান্নাঘরে একটু আয় তো । টিউলির
মা বললেন।
ঘরগুলো মেরামত
করার সময় রঞ্জনা কয়েকবার টিউলিদের বাড়িতে এসেছিল। রঙ করে টিউলিদের জন্যে আলাদা বেড়রুম
, রিডিংরুম ও ডাইনিং রুম সাজানোর পর রঞ্জনাও এ প্রথম টিউলিদের বাড়িতে
আসা। কিছুদিন মামাবাড়ি কুসুমপুরে থাকায়
রঞ্জনা এর আগে টিউলিদের বাড়িতে আসেনি। সুমিত ও রঞ্জনাকে রিডিংরুমে বসিয়ে টিউলি রান্নাঘরে
গেলে রঞ্জনাও তার পিছু পিছু রান্নাঘরে যায়।
সুমিত টিউলির
রিডিংরুমের চারদিকে তাকিয়ে তাজ্জব হয়ে যায়। পাশা্পাশি
দুটো আলমারী, একটা বইতে ভর্তি , আর একটাতে
নানা ধরনের পুতুল ও হাতের কাজ করা শিল্প সামগ্রী। সুমিত প্রথমে বইয়ের আলমারীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। বাংলা সাহিত্যের নামকরা লেখকদের গল্প উপন্যাস, ইংরেজি সাহিত্যের বেশ কয়েকটা বইও তার চোখে পড়ে।সয়েন্সের কয়েকটা বইও রয়েছে দেখে সুমিতের ভাল লাগে। সুমিত ভাবে,টিউলি তো আগের সেই টিউলি নেই, আলমারীর বইগুলো থেকে
বোঝা যাচ্ছে সে পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।রঞ্জনা তো এ কথাটা তাকে কখনোই বলেনি। রঞ্জনার কাছ থেকে জানতে হবে সে তার বান্ধবীর
কাছ থেকে বইপত্র নিয়ে পড়া শোনা করে কিনা। সুমিত পাশের আলমারীর দিকে চোখ
রাখে। আলমারীর
মাঝের তাকের উপরের কাঁচের পাল্লায় লেখা ‘ মেলা থেকে কেনা’
। এবার সুমিতের চোখ পড়ে আলমারীর উপরের তাকে, কাঁচের উপরে লেখা ‘ আমার সংগ্রহ: হৃদয় মাঝে’ । সুমিত
ভাবে,
টিউলি হৃদয় মাঝে কী সংগ্রহ করে রেখেছে একটু দেখিই না! সারি সারি সাজানো কয়েকটা কাগজের নৌকা! এগুলো তো
কয়েক বছর আগে জলে ভাসানো তারই সেই ‘কাগজের নৌকা’! তারই হাতের তৈরি কাগজের নৌকাগুলো জল থেতে তুলে আলমারীতে সযত্নে সাজিয়ে রেখেছে
টিউলি , সুমিত সে কথা ভেবে অবাক হয়।
সুমিতের মনে হয়, তার থেকে আড়াই তিন বছরের ছোট টিউলিকে বোনের মতো ভালবাসা ছাড়া অন্যকিছু বলে
ভাবতে পারেনি কোন দিনই।
আজ কিন্তু টিউলির আলমারীতে কিশোর
বয়সে গাঙের জলে ভাসানো কয়েকটা কাগজের নৌকা সুজ্জিত দেখতে পেয়ে সুমিতের মনটাতে খুশির
আমেজ দেখা দেয়। সে
ভাবে, রঞ্জনার কাছে তার সম্বন্ধে টিউলির
মন্তব্যগুলো আসলে সে মন থেকে করেনি।
No comments:
Post a Comment