মেহেকানন্দাকাব্য
বাহিরে তুফানী বাতাস...
বাহিরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি...
চিতার আগুনে দাদা ঠাকুরের হারমোনিয়াম পুড়ছে
পুড়ছে দাদা ঠাকুরের দশটি আঙুল।
আমি বাতাস ধরি
মৃত আত্নার কন্ঠে শুনি কুয়াশার গজল...
এইসব মেঘ, মেহেক, ঝড়,
তুফান, চিতাগ্নি, বনাগ্নি লন্ডভন্ড করে প্রায়শঃ মধ্যরাতে আমার কণ্ঠ পেঁচিয়ে
ধরে সাপ অথবা চিকন চিকন আগুনের মালা...
কিছুতেই আর মুক্ত হতে পারি না...
আমি যে হারমোনিয়াম পুড়িয়ে
ফেলেছি
আমি যে আমার দশটি আঙুল পুড়িয়ে ফেলেছি চিরতরে...
_________
জন্মান্তরের
প্রতি-ভোরে কুয়াশা কুড়াই
কুয়াশার
বিচি জমিয়ে রাখি মৃত ঠাকুরমা'র ঝুলিতে
একদিন
আমি চোখের মণিতে মাইলের পর মাইল ফসল
ফলাব...
নিশ্বাসগুলো
আকাশে উড়িয়ে দিই...
দূরতম
উড়িয়ে দিয়েছি ছায়া ও বাতাসের কঙ্কাল
একদিন
তারা পাখি হবে, মেহেকানন্দা নদীতীরে...
রৌদ্রোজ্জ্বল
এই দিনে
আপন ছায়া
কেটে দিচ্ছি
প্রতিঅঙ্গে
মেখে নিচ্ছি ছায়ার রক্ত।
_______________
কে যেনো
আমার কন্ঠস্বর থেকে
নিদ্রাতুর
কিছু শব্দ লুণ্ঠন করে নিয়ে যায় নিধুয়া পাথারে
অতঃপর
কাচের করাত দিয়ে শব্দগুলো কুচি কুচি করে ভাসিয়ে দেয়
আড়িওল
খাঁ'র বুকে
ভাসে
গলাকাটা নদী
ভাসে
নারী
ভাসে
গলাকাটা নক্ষত্র
শকুনের
ডানায় চিৎকার ভাসে জল ও স্থলভূমে...
মৃত্যুর
গন্ধ চৌদিকে
দূরে যাই
দূরে যাই
পৃথিবীর
কোনো এক রান্নাঘরে আলু-পটল কাটতে ভুলে যাই
আমি
আমাকে কেটে ফেলতে ভুল করি না
ওহ পাখি, পরমাত্মা...
*বিষ পান
করছি না কি বিষের নি:শ্বাস নিচ্ছি
পান করছি
পরমায়ু
প্রজাপতির
ডানা লাগিয়ে দিয়েছি
ধীরে চলো
ধীরে চলো
নিমাই
সন্ন্যাসীর গ্রাম যে বহু দূর
ঐ
দূরত্বে
নিভে
যাচ্ছে অতলান্ত এক আত্মার ছায়া...
অনন্ত মাতৃমঙ্গল
দু'চোখের পাথর ছিদ্র করে
গড়িয়ে পড়ে জল
পৃথিবীর প্রাচীন কবরে
হায়! এ-আনন্দধারায় আমিও জেনে যাই- বর্ষা এসেছে, তজা
জলে ডুব দেবে কঠিন কাছিম...
পাতিহাড়ে পড়ে বৃষ্টির ফুল, চকিত
হরিণ ভয় নেই তোমার
আদি বর্ষায় জল আর গহীন জঙ্গলে আমরা ছিলাম আদি ভাই বোন...
সর্বদা মানুষ থাকি না তাই
অর্ধেক চাতক, চাতকিনী...
প্রতিঅঙ্গে বৃষ্টির গজল মাখি আমি আর মৃত ঠাকুর মা (সঙ্গে
তাঁর ধর্মান্তরিত প্রেমিক)
হায় বর্ষা! জীবিত আর মৃতের
অনন্ত মাতৃমঙ্গল...
No comments:
Post a Comment