05 September 2016

সুলতানা শিরীন সাজি




তুমি আসছো বলে
তুমি আসছো বলে
আমার বাড়ীর বাইরে ঝোলানো উইন্ডচাইমের টুংটাং এ সুর শুনতে পাচ্ছি
তোমার আসার সুর।
তুমি আসছো একথা জানলেই
আমার উঠোন জুড়ে আলোকিত জোছনার মত
তোমার ছায়া এসে পড়ে।

আমি এ ঘর থেকে ও ঘরে যাই-
সবখানেই তোমাকে দেখি।
তুমি।
তোমার চোখ।
তোমার চুল।
তোমার হাসি।
তোমার প্রিয় বাতাবীলেবুর গাছ।
নিজের দিকে তাকাতে পারিনা আমি-
সব কাজ ভুল হয়ে যায়।

তোমার জন্য ঘুমচোখে সর্ষে ইলিশ রাঁধতে বসি রাত দুপুরে
ঘরের আসমানীরঙ পর্দা খুলে কাছতে বসি।
শুধু তুমি আসছো জানলেই এমনই হই আমি।
তোমার সূর্য ওঠা থেকে আমার সূর্য ওঠা ভোর।
কতদুর থেকে আসছো তুমি,
সে কথা আমার উঠোনের ঘাসফুলও জানে;
আর জানে একুরিয়াম এর নীল মাছের দল।
তোমার গীটার এর তার ছুঁতেই
বেজে ওঠে আনমনা সুর-
আমি গান গাই।
আমি গান গেয়ে ঘুরে বেড়াই 
কি গান গাবো যে ভেবে না পাই”।

তুমি আসছো সেই কতদিন পর,
আমি তোমার আসার সুর শুনতে পাচ্ছি।
গানের সুরের মত ভেসে ভেসে তুমি আসছো
আমি চোখ মেলে আছি আমার আকাশ বাড়ির একান্ত জানালায়!




পঙতিমালা
____
মন ছলকায় মনের ভেতর
চোখ ছলকায় চোখে
হাতের মুঠোয় হাতের আদর 
'জনই তা দেখে?

____২
পাখির স্বভাব উড়তে শেখা
আমার কেনো উড়াল দেবার আশ?
তোমার চোখে অবাধ সাঁতার 
রঙিন বুনোহাঁস!

_____৩
সাত সতেরোয় যে গান বাজে
মধ্য দুপুরবেলা
তোমার আমার পাখার বদল 
প্রিয়তর খেলা।

_____৪
তোমার ভিতর নদীর বাড়ি
খুঁজতে যত যাই
নদীও নাই বাড়িও নাই
বিরহগীত গাই।

_____৫
দূর বলেছে কাছে আসো।
কাছে যতই যাই
তোমার আমার দুরের জীবন
কোথায় তোমায় পাই!

_____৬
মন পবনের মাঝি বলে 
তোমার বাড়ি যাবো।
তোমার বাড়ি আমার বাড়ি
কতবার তা কবো?

_____৭
সর্ষে ফুলের হলুদ রঙে 
চোখের বয়স বাড়ে।
রংধনুর ওই সাত মোহনা
বুকের গহীন ঘরে।

_____৮
তুমি যদি আমার মত
শুধুই তুমি হতে
নীল জোছনার নদীর ঢেউ এ 
উদাস ভেসে যেতে।




সে
যতটুকু আলোর খেলা চলে চারিধারে
অন্ধকার সেখানে থাকে চুপিসারে।

বুকের কাছে হলুদ ফুলের মত সুবাসিত কলরব।
চোখ তার নীল নাকি কালো!
ঠোঁটের কাছে কালো তিলটাতে পৃথিবী ঘুমায় তার।
যতবার আলো থেকে অন্ধকারে যাই
ঠোঁটের সেই তিলটার ব্যাসার্ধের দিকে তাকিয়ে
একটা বই এর প্রচ্ছদ মনে আসে।

তার চোখ আর চিবুকের কাছে জমা রাখি
একলা দিনের আলো।
শুধু- 
অন্ধকার ভীড় করে এলে ভয় হয় খুব।
কালো কালো ছোপ ছোপ জমাট ধোঁয়ার মত ভয়।
সেইসময় সে কাছে এলে
ভাল্লাগে খুব।
কাঁপা হাতে তাকে ছুঁয়ে রাখি।
আর-
জগতের সমস্ত অন্ধকারকে তাচ্ছিল্য করি অনায়াসে!





অপাংক্তেয় এই উদাসী
খুব সাধারন জীবন যাপন।
বুকের ভিতর সুখের কাঁপন।
দৃষ্টি উদাস।
দূর পরবাস!
চোখের ভেতর একলা আকাশ।

ভালোবাসার বসতবাড়ি,
কেউ জানেনা কেউ বোঝেনা।
সুখের ভিতর দুখের রাজহাঁস।
একলা থাকে, একলা ভাসে।
ছায়ার ভিতর মানুষ বুঝি অমনি আসে?
এই বিজনে,সংগোপনে,
হাতের মুঠোয় হাতের ছোঁয়া ভালোবাসে।

অনেক দুরের উতল হাওয়ায়,বৃষ্টি নামায়।
চোখের পাতার ভিজতে থাকা কাজল কালোর কান্নাটুকু
মুছিয়ে যে যায়!
এই উদাসী অপাংক্তের, সুরের মায়ায় তাকেই শুধু ভালোবাসে।
দূর্বাঘাসের সবুজ চাদর জড়িয়ে রাখে যে আদরে।
ঘুমের মাঝে স্বপ্নঘোরে।

ঠোটের কাছে তিলের সুবাস,ফুলের মতন
যে জেনেছে সেই তো জানে ভালোবাসার জীয়ন কাঠি বাঁচায় জীবন।
একটা জীবন।
ছায়ার মতনমায়ার মতন।


No comments:

Post a Comment