আইডেন্টিটি
কোথাও কি চিহ্ন রইল পড়ে? ভরদুপুরে হেঁটে গেল
জটা চুলের মেমসাহেব পাগলি। ঝাঁঝাঁ দুপুরের মুখে ঝামা ঘষে ছেলেটা ঢিল ছুড়লো জলে।
বাড়ি কোথায় রে তোর? এক গাল হাসি- উধার। কিধার?- ও হুসেনপুর, পুরানাদিল্লী.. বাপ-মা, ভাই বোন ওরা কোথায়? দো ভাই থা, ওয়াসিম, বাসিন। বহিনকা নাম, মুন্নী। তা এখানে কী করে এলি? মাথা দুলিয়ে
মৃদু মৃদু হাসে। এ দেশে যে এলি, তোর কি জিপিএস একটিভ ছিল?
এবার হো হো হাসি.. চলে যাবার আগে হাত পাতে, রুপিয়া? ওর তথ্যাদি রেকর্ড রাখেনি অন্তর্জাল।
রাখে না। রাখলে কি ও ফিরে যেত হুসেনপুর, দর্জি বাপের
ভিটেয়?
আমার জিপিএস অন । পথ ভুল হয় না অনেক দিন। আমার জন্য পিক্সেল
পিক্সেল দরজা খুলেছে অন্তর্জাল। দিয়েছে আইডেন্টিটি।
বদলে?
কখন খাই, কখন ঘুমাই, কোথা
থেকে ট্যাক্সি চড়ি সমস্ত তথ্য রেখেছে জমা তার গোপন কুঠুরিতে।
নিজেকে গোটাতে চাই যত, পাখি উড়ে যায়। পাখি, সেই যে যার গায়ে লেগে আছে মেমসাহেব পাগলির বিষাদ.. আর আমি নিজের অস্তিত্ব সঙ্কট বাড়াতে
বাড়াতে আফিমের নেশায় বুঁদ..ফের ঢুকে পড়ছি সেই গোলকধাঁধারই ভেতর।
পাহাড়-নদী-পাহাড়
সূর্যোদয় বা গোধূলি, পুব বা পশ্চিম, এসব
সময়ে ভোরের হাতের সাথে গোধূলির হাতের খুব পার্থক্য আসলে থাকে না। আর পাহাড় ভাবলে
তাই নদী, নদী ভাবলে পাহাড় এসে যায় এভাবেই। তোমার-আমার ঐশ্বর্য হয়ে এভাবেই সুন্দরেরা
আসে। নিজেরাই সপ্তর্ষি আর ঝিনুকে ঝিনুকে লিখে রেখে যায় প্রেম স্বরলিপি। তুমি জানো
না, অথচ পর্বত আরোহন একটা ক্রমিক অধ্যবসায়।
এখন, পনের আর ঊণপঞ্চাশ এসে মিলেছে দ্রাঘিমায়, আমাদের আকাশও খুব
দূরে আর নয়! যে নদীটা আঁকতে গিয়ে আমরা এঁকেছিলাম রেলগাড়ি সেখান থেকে জেগে উঠছে কিছু আলোপাখি। দেকার্তের দিকে ছুটে
আসছে দলছুট এক তারা। একটি সুবর্ণ রেখাকে ঘিরে ধরে মধুচন্দ্রিমার দিন আসছে
ঘুরে। ঘুমঘুম প্রতিবিম্বে ফুটছে আনন্দ প্রতিমা। ডাউন মেমোরি লেনে এখন জিরো পাওয়ার
আলো ফুটছে। তবু ভাবতে পারছি না ঘাসের সাথে পুনরায় সখ্যতার কথা। তোমাকেও বলতে চাই- শালবন থেকে উড়ে আসবে বিবর্ণ যে পাতা
তাকে তুমি রেখো পাঁজরে যত্ন করে। বদলে একবার আমায় ছুটি দিও।
আসছে শীতে আমরা শুধু পাহাড় বা নদী- যে কোনো একটিকেই বেছে নিতে
পারবো।
লগ ইন
একটা সরলরেখার মন ও সোনামন, চকখড়িতে
লিখে রাখ আজ জলের ঢেউ। বাতাসের নুন তাকে ডেকে নেবে কাছে...
আমাদেরও ছিল কিছু সুখ। বাকিটা ইনস্যানিটির দরজায় রাখা ক্লান্ত
কম্পিত হাত।
দেখতে দেখতে তোর সাথে আঁকতে চাইলাম স্রোতস্বিনী এক নদী। তোরই সাথে, বহুরূপে বহুবার যে তুই আসিস।
আর আমিও
কি জানি না, পাহাড় আঁকার আগেই প্রতিবার কুয়াশায় কী করে নিজেকে সরিয়ে নিস।
জানলা থেকে বিছানার চাদরে এসে
পড়া তেরছা রোদে বালিশের ওম ভুলে কী করে নিজেকে
সরিয়ে নিস নিরিবিলি
দূরত্বে।
ছিল সত্যি
ছিল এমন কিছু দিন। একটা নদী, একলা পাখি, উদাস রোদে বিছিয়ে দেওয়া অভিমানী
অবসাদ।
জানিস বৃষ্টি
এলে ভাবতাম এসেছিস...
এই তো এখন।
আবার বৃষ্টি। আজ।
তুই আসছিস?
গিমিক
ঝড়ো এক আদর প্রাবল্য
শেষে বহুদিন পর যখন ঘুমিয়ে পড়ছি ঠিক তখনই অজান্তে জেগে উঠছে আশ্চর্য এক পৃথিবী আর
ছড়িয়ে দিচ্ছে তার বাণিজ্যিক প্রশাখা। কে না জানে গ্লোবালাইজেশন মানে
এখন
বাতাসের কানে কানে একথা সে-কথার ছড়াছড়ি। আর আমিও তেমন যতবার সারল্য লিখতে যাচ্ছি
ততবার কাগজে জুড়ে বসছে বর্গক্ষেত্র-আয়তক্ষেত্রের আবাসিক প্রকল্প বা অবাধ বাজার
ব্যবস্থা। অন্ধকার থেকে একটু করে আলো ফুটলে ইনস্ট্যান্ট কফির ধোঁয়ায় জন্ম নিচ্ছে
লোকনিন্দা। লেটার বক্সে কতদিন ধরেই তো খুঁজছি অজানা কারো চিঠি। ভাবছি চিঠি পেলে
তার গায়ে লেগে থাকা প্রেরক শ্বাস টেনে নিতে নিতে তোমাকে লিখে যাবো, ইউক্লিড থেকে
এক ইউকেলিপটাসের জন্মকথা।
তুমি জানো, নিঃসঙ্গতা ও
ইনসমনিয়া উভয়ই এক আতঙ্ক বিশেষ। ইনসমনিয়াক মাত্রই জানেন কলম আঁকড়ে ধরা এইসব
মুহূর্তেও আকাশ থেকে কী করে খসে পড়ে এক একটা তারা.. আর টিউনের আগে-পরে থেকে যায় ওই
এক গিমিক পৃথিবী..
যে দৃশ্যে তুমি ছিলে
কিছু
দ্বিধা। কিছু দ্বন্দ্ব। আমাদের
প্রতিচ্ছবি। ভাবো দুঃখ চিনি না? দূরত্ব বাড়িয়ে দিলেই
আত্মসমীক্ষার পথ সহজ হয়ে যায়! কাল রাতে ঘুমের ভেতর, কান্না
ভেঙে ভেঙে শব্দ কম্পাঙ্কে যখন ছড়িয়ে পড়ছে একের পর এক দৃশ্য তখন মৃগনাভি সুগন্ধে
ভরেছে অপার নগ্নতা। আর রহস্যময় ব্রেইলসংকেতে আমি ছুঁতে
চাইছি ছটি বিন্দুতে ভর করে তোমাকেই।
রেণু
রেণু কমলা অভিমানে ঘুমিয়ে
পড়ার আগেই এইসব অবিন্যস্ত ভাবনার অন্তরালে এক ফালি নয়া চাঁদ উঁকি দিলে জন্ম নেবে
অপেক্ষা।
এসো
বৃষ্টি নামাই।
তোমার
গুন গুন গুনের ভেতর সেঁটে দিই একটি ঘুমন্ত জবা। এই সূর্যাস্তকাল ঢেকে যাক মেঘের
গুমরে।
No comments:
Post a Comment