দুঃসময়ের বারান্দায়
রাজশ্রী
অনিমেশ'দা মনে আছে তোমার
আচার্য্য বাড়ির সেই শ্বেত করবী ফুলের কথা?
এক গোছা ফুল আমার খোঁপার ভাঁজে পরিয়ে দিয়ে বলেছিলে-
জানিস রাজশ্রী, তোকে ঠিক লক্ষ্মী ঠাকুরের মত লাগছে৷
তখন কতোইবা বয়স হবে,তের বা চৌদ্দ?
বিশ্বাস করো,ভালবাসা কি বুঝিনি; তবে সেই প্রথম অনুভূতিটুকু
ঝুলেছিলো ব্যক্ততার অক্ষমতায়৷
হয়তো সেদিন থেকেই শুরু আমার মন মন্দিরে তোমার পূজো!
অনিমেশ'দা মনে আছে তোমার
রথের মেলার কথা?
যেদিন লাল চুড়ি কিনে বলেছিলে,
দেখতো শ্রী, মালতীকে চুড়ি গুলো ঠিক মানাবে তো?
“কোন মালতী? ভূপেনদার
সেই বাদরমুখী বোনটা?”
আমার কথা শুনে খুব জোরে শব্দ করে হেসে ছিলে তুমি৷
খুব অভিমান হয়েছিল সেদিন।
পরে অবশ্য বুঝেছি, আমায় ক্ষেপানোর জন্য বলেছিলে৷
অনিমেশ’দা তোমার
মনে আছে
সেই কীর্তনখোলা নদীর কথা?
যাকে স্বাক্ষী রেখে প্রথম অধরসুধায় অন্বিত ছিলেম দু’জন৷
কই, অন্তর্বত্নী হবার আগে তো একবারও মনে পড়েনি তোমার-
আমি নিচু জাতের আর তুমি ব্রাহ্মণের ছেলে!
বুঝেছিলাম আমি সবটাই ওসব তোমার বাবার কথা ছিল৷
অনিমেশ'দা তোমার মনে আছে,
যেদিন খগেন খুড়ো আমার বিয়ের জন্য ঐ বুড়োটাকে এনে বলেছিল আমি
নাকি এঁটো,উচ্ছিষ্ট৷
আমায় নাকি কেউ বিয়েই করবে না!
সেদিন তোমার পা ধরে খুব কেঁদে ছিলাম৷
শুধু আমাদের অনাগত স্বীকৃতির আশায়৷
ঐদিন তোমার ভেতরটাও যে আমি দেখেছিলাম- কতোটা বেদনায় নীল ছিল।
বিশ্বাস কর একবারও তোমার ঐ ছলছল নয়নে আমার জন্য পরিগ্রহ বা
বিশ্বাসঘাতকতার চিহ্ন দেখিনি৷
আমি জানি অনিমেশ'দা যেদিন আমার সিঁথিটা সিঁদুরে রাঙ্গা হয়েছিল
সেদিন তোমার ভেতরটাও রাঙ্গা হয়েছিল! পার্থক্য শুধু এটুকুই আমি সিঁদুরে রাঙ্গা আর
তুমি রক্তে ৷
কি করব বলো, আমি যে স্বৈরিণী হতে পারিনি সেদিন৷ তাইতো অবচ্ছেদন
মেনে নিতে হল দুজনকেই!
তুমি মেনে ছিলে, আমি মেনে ছিলাম; শুধু সমাজ মানেনি৷
সে রাতে তুমি গ্রামত্যাগী হয়েছিলে আর আমি- দেহত্যাগী৷
ঐ দিন আমার চিতা জ্বলেনি,
তবুও আমার আত্মার শান্তি মিলেছে জানো!
সেদিন আমার মাথার দিব্যি খেয়ে বলে ছিলে
যদি তোর না হতে পারি তবে দু'জনে একই চিতায় জ্বলব৷
একই চিতায় জ্বলতে পারিনি তাতে কি! আত্মার মিলন আটকাবে এমন
সাধ্যি কার?
_________________
No comments:
Post a Comment