আহসান সাহেবের বয়স
মধ্য পঞ্চাশ। প্রথম স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর বেশ কয়েক বছর একাই ছিলেন
তিনি। ঠিক একা বলা যায় না। সঙ্গিনীর অভাব তাঁর কখনো ছিলনা। তবে তাঁদের কাউকে
নিয়ে নিশ্চিন্তে সংসার করবেন তেমন খুঁজে পাননি। ক্ষণিকের সঙ্গিনীদের সবাই তাঁর
চেয়ে তাঁর টাকাকেই বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। বয়স বাড়ছে তার। শরীরটাও বেশী ভাল
যাচ্ছেনা। রক্তে সুগার বেড়েছে সেই সাথে ব্লাড প্রেশার মাথার পিছনের রগটিকে
দপদপিয়ে রাখে। তার একজন সার্বক্ষণিক সঙ্গীর দরকার। কাছের পরিচিত সবাইকেই তিনি বলে
রেখেছেন পছন্দমত মেয়ের কথা। সেই সুত্র ধরেই বেশ কিছু মেয়ের ছবি তাঁর কাছে পাঠানো
হয়েছে। ১৫টি ছবির মধ্যে হাল্কা পাতলা গড়নের বেশ সুশ্রী মায়াবতী চেহারার
মেয়েটির ছবির দিকে তিনি অপলক চেয়ে রয়েছেন। ছবির সাথে মেয়েটির পুরো বায়ডাটাও
আছে। নাম মাধবী, বয়স- ৩০। মাধবীর ছবির দিকে চেয়ে তাঁর ইচ্ছে করছে এখনি বিয়ের
দিন তারিখ ঠিক করে ফেলতে। এই বয়সেও শরীরে বেশ টানটান উত্তেজনা অনুভব করছেন তিনি।
মাধবীর সহজ সরল মুখশ্রী ভীষণভাবে তাঁকে আন্দোলিত করে। কনকনে ঠাণ্ডা পৌষের রাত।
বিয়ের জন্য উত্তম সময়। বুকের ভেতর নতুন বউয়ের সুঘ্রাণ মাখা তরতাজা শরীরের ওম।
আহ! ভাবতেই আহসান সাহেবের প্রৌঢ় শরীর উষ্ণ হয়ে ওঠে।
আজ আহসান সাহেবের বিয়ে। যদিও এটি তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে কিন্তু তিনি কোন আয়োজনের
কমতি রাখছেন না। আত্মীয় স্বজন দাওয়াত দেওয়া, কনের শাড়ি গহনা থেকে শুরু করে
বিউটি পার্লারের সব কিছুই তিনি গভীর পর্যবেক্ষণ করছেন। বিয়ের রাতে তিনি মাধবীকে
অপরুপা দেখতে চান। বিয়ের ঝামেলা শেষ হয়েছে। আত্মীয় স্বজন সবাই বিদায় নিয়েছে।
রাত প্রায় একটার মত বাজে। দোতলার শোবার ঘরের পাশের ঘরটি তাঁর স্টাডি ঘর। ঘুমাতে
যাওয়ার আগে এই ঘরটিতে বেশ অনেক খানি সময় তিনি কাটান। তাঁর প্রয়োজনীয় ওষুধ পত্র
এই ঘরেই রাখা হয়। স্টাডি রুমে আরাম চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন তিনি। বিয়ের
ঝামেলার কারনে গত কয়েকদিন তিনি ব্লাড প্রেশারের ওষুধ খেতে ভুলে গিয়েছিলেন। মাথার
পেছনের রগটি এই মুহূর্তে ভীষণ রকম দপদপ করছে। হাজার লাল গোলাপ - সাদা বেলী ফুল
দিয়ে সাজানো বাসর ঘরে নব পরিণীতা স্ত্রী তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে এটি এখন আর তাঁর
শরীরে শিহরন তুলছেনা,তিনি খুব ক্লান্ত বোধ করছেন। রাতের ঘুম ঠিকমত হওয়া দরকার ।
ব্লাড প্রেশারের অষুধের সাথে তিনি একটি কম ডোজের ঘুমের ওষুধও খেয়ে নিলেন। ক্লান্ত
আহসান সাহেব বাসর ঘরে অপেক্ষারত মাধবীকে রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। গোলাপ আর বেলী ফুলের
মাতাল করা গন্ধ জুড়ে প্রবল অপেক্ষা আর বুনো তেষ্টায় পৌষের রাতে কনকনে ঠাণ্ডায়
স্বামীর উষ্ণতা পাওয়ার জন্য একখানা জীবন্ত শরীর অপেক্ষায় থেকে চঞ্চল হয়ে ফজরের
আজানের সুরের সাথে ঘুমিয়ে পড়ে।
No comments:
Post a Comment