21 May 2017

লাবণ্য প্রভা






০১
পঙ্খীরাজ ঘোড়ার ডানা ভেঙে গেছে। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে রাক্ষসপুরীর সিংহদুয়ারের সামনে। আমার মাথার ওপর কাঁটা, আর পায়ের নিচেও কাঁটার গালিচা।কাঁটা মাথায় নিয়ে পায়ে দলে পথ অতিক্রম করি; আমি অতিক্রম করি পাপ, পরমাঙ্ক...
রাক্ষসপুরীর চারদিকে জলের পরিখা। ব্যাঙমা-ব্যাঙমী বলেছিল, রাতের কোনো এক প্রহরে পরিখার জল শুকিয়ে যায়। আমি ও আমার ডানা ভাঙা পঙ্খীরাজ অপেক্ষা করি, যেন জল সরে যায়। নগ্ন পায়ে ওই পরিখা পার হতে হবে আমায়।
হায়!
মা আমার রাক্ষসপুরীর অলিন্দে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এক চন্দ্র
দুই চন্দ্র
তিন চন্দ্র
সহস্র চন্দ্র বৎসর পার হয়ে যায় ... আমিও  বেড়ে ওঠি রাক্ষসের উদরে। কেবলই বেড়ে উঠি,পালাবার পথ খুঁজে পাই না।
কোনো রাজপুত্র আসে না আমার জন্য। ব্যাঙমা-ব্যাঙমী সারারাত অলৌকিক বৃক্ষের ডালে বসে কাঁদে। তাদের ক্রন্দনে বৃক্ষের পাতা ঝড়ে পড়ে। ঝরা পাতারা সর্প হয়ে বাগানে নৃত্য করে। আমি রাক্ষসের উদরে বসে থাকি, দাঁড়িয়ে থাকি...



০২
কোনোকালেও কোথাও ছিলাম না আমি, কিংবা ছিলাম; জলের চিতায়। তবুও জল তৃষ্ণা আমার।প্রার্থনা শেষে আমি জলের ঈশ্বরের স্তুতি করি, তার জন্য শোক রচনা করি। অথচ প্রতিরাতেই তিনি আমার গৃহ থেকে জলের কলস সরিয়ে নেন।
ঘর ছেড়ে বৃক্ষের কাছে যাই। বৃক্ষ, আদি মাতা আমার, আমাকে তোমার বীজের মাঝে আগলে রাখো।
আমার জননী ছিলেন দেব-বংশীয়া। ভবিষ্যৎ দেখতে পান তিনি। 
তুই কোনোদিন সুখী হবি না, মা। তোর কোনোদিন জলতেষ্টা মিটবে না।
তুই জন্ম বেহুলা। জানিস তো বেহুলাদের ঘর থাকতে নেই। 
আজন্ম জলের দাসী। পাহারা দেই মৃত স্বামীর হাড়।
মনে পড়ে, কোনো একদিন জল চেয়েছিলাম বলে আগুন খেতে দিয়েছিলেন ঈশ্বর। কুমোর পাড়ায় জলের ঘটি চুরি করতে গিয়ে আমি পাহারাদারের কাছে ধরা পড়ে যাই। পাড়ার লোকেরা আমার কেশ কেটে নেয়। কেশ হারিয়ে আমি বিলাপ করি না। কাটা কেশ নিয়েই মৃতসখীদের সাথে গোল্লাছুট খেলি...

No comments:

Post a Comment