সিলভিয়া প্লাথের দুটি কবিতা
ভাষান্তর : আবুল কাইয়ুম
সিলভিয়া প্লাথ
(১৯৩২-১৯৬৩)প্রত্যাবাসিত পিতা-মাতার অস্ট্রীয় ও জার্মান রক্ত
নিয়ে জন্মেছিলেন আমেরিকার বোস্টনে। তিনি ১৯৫৫ সালে লেখাপড়া লেখাপড়া করতে যান ইংল্রান্ডের
ক্যাম্ব্রিজে এবং ১৯৫৬ সালে ভালোবেসে বিয়ে করেন প্রখ্যাত ইংরেজ কবি টেড হিউজকে। ১৯৬৩
সালে মাত্র একত্রিশ বছর বয়সে প্লাথ আত্মহত্যা করেন। তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ– ‘দ্য ক্লসাস’
(১৯৬১) এবং মৃত্যুর পর প্রকাশিত ‘এরিয়েল’ (১৯৬৫)। ১৯৮১ সালে তাঁর ‘কালেক্টেড পোয়েমস্’
বেরুলে তাঁকে মরনোত্তর পুলিৎজার পুরস্কারে
ভূষিত করা হয়।
এক ধরনের অদ্ভূত প্রকৃতির ভীতি, একপ্রকার হিস্টিরিয়াগ্রস্ত
রোগীর মতো বক্তব্য ও দুর্দমনীয় হতাশা সিলভিয়া প্লাথের কবিতার উপজীব্য। তবে অসাধারণ
সৃজনী প্রতিভার ছোঁয়ায় তাঁর নৈরাশ্য ও বিষাদ দারুণ শৈল্পিকভাবে বাণীবন্ধ হয়েছে। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ
দাম্পত্যজীবনের সমস্যা, প্রসব বেদনা, সন্তান পালনের কষ্ট প্রভৃতি ব্যক্তিগত সমস্যা
ও কলঙ্কজনক অতীত নিয়ে আত্ম-স্বীকৃতিমূলক কবিতা লিখেছেন তিনি। আত্মহত্যার মাধ্যমে অকাল
মৃত্যু তাঁকে কবি হিসেবে বিশ্ববিস্তারী খ্যাতি এনে দেয়।
পাগলি মেয়ের প্রেমসঙ্গীত
আমি চোখ মুদি এবং সমগ্র পৃথিবী মরে গিয়ে ঝুরে ঝুরে পড়ে;
আমি চোখের পাতা মেলি এবং সবকিছু আবার জন্মলাভ করে।
(আমি মনে করি আমার মগজের ভেতর তোমাকেই করেছি নির্মাণ।)
তারাগুলো নেচে নেচে আবির্ভূত হয় লাল ও নীলে,
স্বেচ্ছাচারী কালো দ্রুত ধেবে আসে;
আমি চোখ মুদি এবং সমগ্র পৃথিবী মরে গিয়ে ঝুরে ঝুরে পড়ে।
আমি স্বপ্নে দেখি, তুমি আমাকে সম্মোহনে নিয়ে গিয়েছিলে শয্যায়
এবং চন্দ্রাহত করে গেয়েছিলে আমায়, চুমুতে চুমুতে করেছিলে পুরো উন্মাদিনী।
(আমি মনে করি আমার মগজের ভেতর তোমাকেই করেছি নির্মাণ।)
ঈশ্বর আকাশ ভেঙে পড়ে গেল, নরকের আগুন নিস্তেজ হয়ে গেল,
অপ্সরা-অপ্সরী আর শয়তানের অনুচরকূল নিষ্ক্রমিত হলো;
আমি চোখ মুদি এবং সমগ্র পৃথিবী মরে গিয়ে ঝুরে ঝুরে পড়ে।
আমি মনে আঁকি এই ছবি তুমি যেভাবে আসার কথা বলেছিলে তেমনই ফিরে এলে,
কিন্তু বুড়িয়ে গেছি আমি এবং ভুলে গেছি তোমার নাম।
(আমি মনে করি আমার মগজের ভেতর তোমাকেই করেছি নির্মাণ।)
তোমার বদলে উচিত ছিল কালো কোকিলকে ভালোবাসা,
অন্তত তারা বসন্তের আগমনে একবারের জন্যে হলেও আসে।
আমি চোখ মুদি এবং সমগ্র পৃথিবী মরে গিয়ে ঝুরে ঝুরে পড়ে।
(আমি মনে করি আমার মগজের ভেতর তোমাকেই করেছি নির্মাণ।)
প্রভাত সঙ্গীত
একটি স্থূলকায় স্বর্ণঘড়ির মতো ভালোবাসা সঞ্চালিত রেখেছে তোমাকে।
তোমার পায়ের তলায় চাপড় মেরেছে ধাত্রী,
তোমার নীরস কান্না ছড়িয়ে পড়েছে সর্ব পরিমণ্ডলের মাঝে।
আমাদের কণ্ঠস্বর উচ্চকিত তোমার আগমন অতিরঞ্জনে।
নবীন প্রতিমূর্তি তুমি। উন্মুক্ত যাদুঘরে তোমার নগ্নতা
আমাদের নিরাপত্তার ছায়াপাত। তোমাকে ঘিরে আমরা যেন ভাবলেশহীন দেয়াল।
আমি আর তোমার জননী নই
একখণ্ড মেঘ হওয়া ছাড়া –যে বায়ুতাড়িত হয়ে আয়নায় সেঁটে যায়
প্রতিফলনের জন্য মন্থর অপসৃয়মানতা নিজের।
সারারাত তোমার প্রজাপতি-নিঃশ্বাস
পাপড়ি-মেলা ফিকে-লাল গোলাপ গুলোতে কাঁপন তুললো। জেগে উঠে টের পেলাম:
দূরের এক সাগর এসে উথলিছে আমার কর্ণ-বিবরে।
এক গমক কান্না তোমার, আমি আচমকা শয্যা ছাড়লাম
ভিক্টোরীয় রাত্রিবাস সহ গাভির মতো ওজন এবং ফুলের সুষমা নিয়ে,
আর তোমার মুখে বেড়ালের মুখের মতো স্বচ্ছ হা।
চৌকো জানালাটির শার্সি তার অনুজ্জ্বল তারাগুলোকে করলো সাদা এবং গলাধঃকরণ।
তুমি প্রকাশ করতে চাইলে মুঠোভর্তি যত সঙ্কেত,
তখন বেলুনের মতো উর্ধ্বারোহী হলো স্পষ্ট স্বরবর্ণগুলোর ঝাঁক।
No comments:
Post a Comment