আমানতঃ
ডিসেম্বরের দুঃখের কবিতা!
[ভারতীয় প্যারামেডিক্যাল ছাত্রী মৃত্যুর দু’বছর পূর্তিতে]
তুমিই
হয়ে উঠতে পারতে নির্যাতিতার প্রতিবাদ পঙক্তি, নারী
পুরুষ
সমতার প্রতীক। হয়তোবা ‘সংগ্রাম কঠিন’ দ্রোহময়
কণ্ঠস্বরের
তেজদীপ্ত তলোয়ার। কাঁটাতারের ওপারের মালালা
ইউসুফজাই
কিংবা তসলিমা নাসরিন যেমন! বুনো গন্ধ মাখা
সব
রাত্রি দিন ছাপিয়ে কেবলতো ভারত নয়, সীমানা ছাড়িয়েও
অথচ
পারলেনা, পারলেনা কেবল মৃত্যুর কাছেই!
আমানত,
ষোলই ডিসেম্বরের চলন্ত রাত বাসে যখন উপর্যুপরি
ধর্ষণের
শিকার হলে তুমি; রড ঢুকিয়ে প্রজননতন্ত্র এফোঁড়
ওফোঁড়
করে রাস্তায় ফেলে গেলো একবিংশ শতাব্দীর নির্মম
অসভ্য!
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ, নৈঃশব্দ্যের নিঃসঙ্গতা উঠে
এলো
আর সর্বদা, মানুষের কণ্ঠস্বরও মানুষের নাগাল পায়না!
তখন
কি ভেবেছিলে আমানত? লক্ষাধিক বছর আগের ইতিহাস?
যখন
ভয়াবহ রকম অসভ্য আর বর্বর ছিলো মানুষ? উত্তরাধুনিক
পৃথিবীর
বিকৃত বর্বরতা নাকি নারীর যোনিতে যোনিতে ভরে দেয়া
আতঙ্কের
গোক্ষুর? আমানত, কেউ আসেনি ছিলে বিবস্ত্রা বলেই!
সাহায্যের
কত আকুলি বিকুলি, অস্ফুটে কি বলে যাচ্ছিলে বারবার?
অফুরন্ত
স্বপ্নের কোনোটাই পূরণ হয়নি তোমার মধুর ঠোঁটের
হে
নারী। একটি ঘর, নরম ফুটফুটে শিশু অফুরন্ত স্বপ্নের
অবশিষ্টাংশ
জানি কিছুই নয়, নীল রাত্রি ঢলে পড়লো আগেই!
অস্ফুটে
বুঝি তাই বলেছিলে বারবার, বাবা কিছুইতো হলোনা আর!
যদিও
ক্লিনিক্যালি মৃত ছিলে তুমি, স্বপ্নময় দু’চোখ হয়েছিলো
শোকস্তব্ধ
শেষ সূর্যাভা। যেন বিষণ্ণতার সমুদ্র ছিলে এক,
চিকিৎসা শাস্ত্রীয় যাবতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে তোমার জানপাখি
তবুও
পাড়ি জমালে ওপারে আমাদের হৃদয়গুলোও হোঁচট খায়
পুরুষ
বলেই ভীষণ লজ্জিত যারা সে পক্ষের কেউ না হলেও
গোপনে
গোপনে নতজানু হৃদয়ে হয়েছি আমিও ক্ষমাপ্রার্থী।
আমানত,
তোমার মৃত্যু কি কিছু পিশাচকেই কলঙ্কিত করে
কেবল?
তোমার মৃত্যু সমস্ত পুরুষকেই বিবেকের জিয়ানো
কাঠগড়ায়
দাঁড় করিয়ে দেয়। আমানত, তীব্র ঘৃণায় আমাদের
অন্তরগুলোও
বাকরুদ্ধ করে দেয়, লজ্জিত, ব্যথিত করে যায়
মৃত্যু
দরোজায় দাঁড়িয়েও পাঁচ পাঁচবার কোমায় চলে গিয়েছিলে,
তিনবার
হার্ট ফেইল করেছিলো তোমার। ছিলে শোকে পাথর,
কান্নায়
জর্জরিত কখনো। তবুও হাসপাতালের শ্বেত শুভ্র বেডে
শুয়ে
আত্মার জল, চোখের জলে এঁকেছিলে গভীর প্রতিবাদ।
ওই
সাহসিনী উচ্চারণ আমাদের হৃদয়গুলোও ছুঁইয়ে গিয়েছিলো
পিশাচদের
দলের দূরবর্তী কেউ হয়ে আমিও ক্ষমাপ্রার্থী সে থেকে
হে
সুদূরতমা মহীয়সী। যদি সম্ভব হয় আমার অক্ষমতাও মার্জনা
করো
তুমি, সত্যিকারের পুরুষ জনম জানি পাইনি আমিও কখনো
২৯
ডিসেম্বর ২০১৪
শেষরাত্রি, উত্তরা।
No comments:
Post a Comment