নতুনের জন্য পুরনো কথাজাল…
জানিনা কেন জানি আজ ভোরের জেগে ওঠা মাত্রই কবিগুরুর গানের বাণী গুনগুনাচ্ছি
মনে-মনে,
"পুরনো জানিয়া চেওনা
চেওনা আমারে আর্ধেক আঁখির কোণে"….
গুনগুনানিটা বেলা যত চড়চড়িয়ে বাড়ে ততই বিঁধে অবকাশের আনন্দন এর
ছায়াতুর দুপুর চেরা বিবিধ ভাবনাকে। সুরের ধারা চারিয়ে যায় আমার যত পুরানো ভাব
ছাড়িয়ে নতুন পাতার দিকে... পাতারা আমায় পুরনো থেকে বহুল বেদনার দৃষ্টিজাল
ভরিয়ে দেয় নব-নব সৃষ্টিগন্ধের সদ্য গজিয়ে ওঠা সবুজ ঘাসের বিভায়…আমি তার গভীর অলিখিত
আভায় প্রণোদিত হয়েই চাই লিখতে যা কিছু আজও অলিখিত তারেই। আমি নিজের অভিজ্ঞানজাত
সকল গানের ভাষায় তার কথাটি বুঝে নিতে চেয়েই বুঝি অলিখিতরে আদৌ সহজ নয় পাতায়
লেখা। কি জানি কি অভাবিত ভাবের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে আমার ভাবনা ছাড়িয়ে অন্যলোকে
নতুন শাদাপাতা! শাদা পাতারা বহুবিধ আনন্দ-বেদনায় হয়ে উঠবে বই –ভেবেই আমি স্বপ্নতাড়িত হই। আমি নতুন পাতার নতুন বন্ধুটি হই। তাদের
জন্য আমার সকল পুরনো ভাষা দিয়েই রচি কথাজালের তৃষ্ণার্ত বিবিধ উপাখ্যান। তারই
সামান্য নমুনা আজ লিখতে চাইছি –
“পাতাভর্তি
মেঘ“-শিরোনামে আমার একখানা বইতে যা লিখেছি তার চার লাইন –
পাতাভর্তি সুখি মেঘ, দুঃখি মেঘ, পাতাভর্তি মায়া।
পাতাদের মেঘ বহু অশ্রুত
গাঁ পেরিয়ে এসেছে।
পাশে বসে মনে হয় ছুঁই, মেঘগুলি ছুঁই।
পাশে বসে মনে হয় আহ তৃষ্ণাজলি, ছায়া।
পাশে বসে মনে হয় ছুঁই, মেঘগুলি ছুঁই।
পাশে বসে মনে হয় আহ তৃষ্ণাজলি, ছায়া।
তারও
ঢের পরে লিখছি আজ নতুন কিছু পঙক্তি পুরনো ভাষায় –
আজ তবে কি কথা গানের তরে! কি চুক্তি বিপর্যয়ের পরে! আশ্রয়-প্রশ্রয়ভারে টলোমলো
এইদেশে আকাশও পড়ছে ফেটে উদোম উল্লাসে! তার পরেও কি কথা থাকে আর!
কি অর্থ শয়তানের সঙ্গে বেলেল্লাপনার!
আজ যদি জোর থাকতো অবাধ সম্প্রদানে তবে একহাত দেখে নেবার বেদনা তত মনে
পড়তোনা যত হলে রক্তপাত হয় ! যত হলে রক্তপাত হয়! তারপরেও অথই রঙ্গ! অশনির সঙ্গে
নাচে
অকুল তরঙ্গ! নাচে দল-উপদলের দঙ্গল! দুশ্চরিত্রের সহস্র ছল!
অকুল তরঙ্গ! নাচে দল-উপদলের দঙ্গল! দুশ্চরিত্রের সহস্র ছল!
অন্যদিকে দৃষ্টিবৃষ্টিভার আশায় বহন করে-করে বাতাসেরও হাঁপ ধরে গেছে আজ! অপেক্ষার
পায়ে আর কত মালিশ-পলিশ! নতুনেরে বলি –এসব রাবিশ কাজ এবার ছেড়ে দে বাপ!
পৃথিবীরও কি দায় এত নোংরা মনুষ্যপাপ, সাপ-শাপান্ত
সামলায়! এসব স্বভাবদোষ এবঙ নিজস্ব আফসোস নিজেরই তৈরী বাপ! নিজেইতো দিয়েছিস বেড়া!
ভেঙে এবার নিজের জন্য দাঁড়া! এই যে নিজের জন্য নিজেই পেটাতে হয় ঢ্যাড়া! এ সত্য
জানতে কিন্তু সময় লেগেছে ঢের! তদ্দিনে জাঁকিয়ে বসেছে শয়তানির জের! মনেও পড়েনা
তত বাঁশিতে আগের মতো একান্ত বসন্ত ধুম, শিশুতোষ শীতের
রোমাঞ্চ, ঘন কদমের ঘুম! তারা ঢাকা পড়ে গেছে অনাকাঙ্ক্ষিত
অচিন ত্রাসে! অনন্য উদ্যানগুলি ভরে গেছে আগাছাতে! ফিরে গেছে সন্ত ঋণ একদম
সহধর্মহীন!
আজ মনে হয় বড়ো প্রিয় গ্রামধর্ম যদি এত দুমড়ানো এত পোড়ান না হতো
অস্তমিত স্বপ্নগুলি শক্তি মনে হতো। কিন্তু সময় ক্রমেই খারাপের দিকে নতজানু বলে
আখের গোছাতে ব্যস্ত রাজ্যে মিথ্যের বেসাতি হচ্ছে খুব। কেবল আপন পথ খোলা রাখতে অপর
পথে কাঁটা তবু পার পাওয়া তারও সোজা নয়, সোজা নয় বাপু, যদি না সত্যরে শক্তি করে দুঃখদিনেও নিজস্বতায় হাঁটো। যদি না স্বার্থের
ধাত বুঝে ধার দাও ডানা, এওজন্মে যথার্থ প্রিয় দেশ ছোঁয়া
হবেনা, হবেনা। এ মোটেও কাব্য না। এ নিতান্ত ঠেকে শেখা।
মূর্খ-ধূর্ত মুখগুলি চিনে বলি বাছা। অনেক আনন্দ গেছে খানাখন্দে বেঁকে, অসূয়া না আলো এই
ধন্দে গেছে পরাণের বহুদিন। এখন ঠেকেছে পিঠ পড়োপড়ো পারের কিনারে। এমন অশনি তবু
দিগন্ত পোড়েনি দ্যাখো, যতদূর চোখ ধায় মেঘে-মেঘে ছবিকাল
যায়। যতদূর পদচ্ছায়া ধূলোজাগা মায়া উড়ে আসে। আসে স্মৃতির উঠোন, মউমউ নেবুতল, বনভোজনের বেলা। এই সেই দেশ।
এই সেই জেগে ওঠা দেশ। একাত্তুরের আদেশ। রক্তমাখা চিঠি, মায়ের মাঠের –
এই সেই জেগে ওঠা দেশ। একাত্তুরের আদেশ। রক্তমাখা চিঠি, মায়ের মাঠের –
বাছা সাবধানে যাও।
শকুনি দিয়েছে চোখ মাঠপানে, সোনাধানে।
ভয় নেই বাপধন, পাঁজরে শক্তি ওঠাও।
মাঠে-মাঠে স্বপ্ন ফলাও।
শকুনি দিয়েছে চোখ মাঠপানে, সোনাধানে।
ভয় নেই বাপধন, পাঁজরে শক্তি ওঠাও।
মাঠে-মাঠে স্বপ্ন ফলাও।
আর নতুন যেসব পথ সবে তেতে
উঠতে লেগেছে
নতুন যেসব চোখ ফুটিফুটি রক্তজবা
নতুন যেসব কথা জনতার আরাধ্য কবিতা মোদ্দা কথা
যা কিছু নতুন তার জন্যই উতসর্গিত করো মাথা।
উঠতে লেগেছে
নতুন যেসব চোখ ফুটিফুটি রক্তজবা
নতুন যেসব কথা জনতার আরাধ্য কবিতা মোদ্দা কথা
যা কিছু নতুন তার জন্যই উতসর্গিত করো মাথা।
ভুলে যাও অসহ্য উদবাস্তু রাত্রি।
ভোর-ভোর উতসাহে ধরে রাখো
ঐতিহ্য ও কৃষ্টি।
আমি কিন্তু জানি সেই ভোর আসছে, আসছে সেই ভোর…
আয়ুর সমান স্মৃতিগন্ধে নতুন এবঙ রাঙা।
ভোর-ভোর উতসাহে ধরে রাখো
ঐতিহ্য ও কৃষ্টি।
আমি কিন্তু জানি সেই ভোর আসছে, আসছে সেই ভোর…
আয়ুর সমান স্মৃতিগন্ধে নতুন এবঙ রাঙা।
No comments:
Post a Comment