অন্তিম
মুহূর্তে
ডাক্তার হাল ছেড়ে দিলেও মৃণ্ময় এখনো রঙ্গিন
স্বপ্ন দেখছে গাঢ় ঘুমে তলিয়ে থেকে। তাই মৃত্যু ওকে ছুঁতেও পারছে না ভয়ে।
গরীব মানুষের সামান্য বসতবাড়ি
মাটির ঘর। খড়ের মোটা ছাউনি মাথায়।
ছাউনির ঝুলন্ত অংশটা রুচি সন্মতভাবে ছাঁটা রয়েছে। দেয়ালের বাইরেটা পরিপাটি করে
গোলা মাটিতে নিকোনো। মেঠো বারান্দাটাও ঝকঝকে পরিষ্কার। ছোট্ট ছোট্ট দুটো জানালা।
জানালার চারপাশটায় খড়িমাটির আলপনা। নিকোনো দেয়ালে খড়িমাটির নকশা। গোবরে নিকোনো
উঠোন। উঠোনের একপাশে তুলসীমঞ্চ। মঞ্চের ওপর পোড়া সলতে সমেত একখানা পোড়ামাটির
প্রদীপ। উঠোনের দু’ধারে নয়নতারার ঝোপ। ঝোপে ফুটে থাকা নয়নতারাগুলো বাতাসের
সাথে খেলায় মেতে আছে। অদূরেই একটা পাতকুয়ো। একপাশে দড়ি বালতি গোছানো রয়েছে। একটা
বাছুর খুঁটে বাঁধা হয়ে ছটফট করছে মাকে কাছে পাবার আশায়। মা গরুটি সামান্য দূরেই
গোগ্রাসে জাবনা গিলছে লেজ দিয়ে মাছি তাড়াতে তাড়াতে।
অবনী মণ্ডল পাশেরই শহর থেকে এই
গ্রামে এসেছেন নিজের পুত্রের জন্য একটি সুপাত্রীর সন্ধান পেয়ে। কিন্তু এই বাড়িটার
সামনে এসে বিমোহিত অবনী মণ্ডলের পা যে আর সরছে না! মঠ নয়, মন্দির নয়। বড়
মানুষের বাগানবাড়ীও নয়। গরীব মানুষের সামান্য বসতবাড়ি। তারই এতো শোভা! এতো
সৌন্দর্য শিল্প-রুচি! অবনী ভুলে গেলেন আরও খানিকটা হাঁটতে হবে তাঁকে।
সহসা বছর আঠেরোর সুশ্রী একটি মেয়ে
বাড়িটির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে সুরেলা কণ্ঠে শুধোলো, কাউকে খুঁজছেন?
- তোমার বাবাকে একবার ডেকে দেবে মা?
ভামবিড়াল
হৈমন্তী বড়ি রোদে দিতে নেমে এসেছিলেন
উঠনে। তখনই দেখলেন, বিষ্ণুপদ বাগানের নিমগাছটার আড়ালে দাঁড়িয়ে পাশের বাড়ির
মেয়ে রুক্মিণীর সাথে খুব হাসাহাসি করছে। দেখেই পিত্তি জ্বলে গেল। ছেলেটা রাতদিন
ছুঁকছুঁক করেই চলেছে এর তার সাথে! বিয়ে দিয়ে ঘরে বৌ এনেছেন। ছেলেটা এক বেটার বাপও
হয়েছে। তবুও শোধরানোর নাম নেই! আর কবে শোধরাবে শুনি?
আধশুকনো বড়িগুলো কুলোয় ছড়িয়ে দিতে
দিতেই মুখ তুলে দেয়ে দেখলেন বিষ্ণুপদ আর রুক্মিণী নেই সেখানে। নিশ্চয়ই তাঁকে দেখে
লুকিয়েছে কোথাও! কাজটা শেষ করে কোমরে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই
চোখে পড়লো ঘটনাটা। বাগানের পেছনেই যে বিশাল আগাছার ঝাড়টা রয়েছে সেটা বেদম নড়ছে!
দেখেই হৈমন্তীর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। ছেলেমেয়ে দুটো বড্ড বাড়াবাড়ি করছে আজ!
দু’টোকে হাতেনাতে ধরে
সায়েস্তা করবেন ভেবে দ্রুত পায়ে ঝোপের কাছে যেতেই দুটো ভামবিড়াল ঝোপের ভেতর থেকে
বেরিয়ে এসেই ছুট লাগালো দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে। দেখে হৈমন্তী স্বস্তির নিঃশ্বাস
ফেলে ঘরে ফেরায় মন দিলেন।
পেছন ফিরতেই দেখলেন বিষ্ণুপদ বসে
রয়েছে ঘরের দাওয়ায়। মা’কে দেখে দাঁত বার করে হেসে বললো, ভামবিড়াল দুটোকে দেখে এলে! খুব পাজী হয়েছে। রাতদিন এখানে সেখানে...
হৈমন্তী দ্রুত ঘরে ঢুকে গেলেন নিজের মনে গজগজ করতে করতে,
ভামবিড়ালকে কি দোষ দেবো? ঘরের ছেলেটাই যে...
No comments:
Post a Comment