চুমকি
ছিল দশ
বছরের। রমাকান্তর
বার হবে।
মন
বন্ধ করে
রাখার দরজা
থাকে
না। তাই
ফেলে আসা
জীবনের স্মৃতিকে
বেশী দিন
দূরে সরিয়ে
রাখা যায়
না। রমাকান্তর
কাছে সেদিনের
চুমকি ছিল
ক্ষণিক
বিচ্ছুরিত হয়ে উঠা একটি মেয়ে।
টানা টানা
চোখ, একটা আলাদা
ছাপ মাপের
সাঁচে যেন
তৈরি ছিল
সে। ওরা
দু জনেই
এক ক্লাসে, এক স্কুলে পড়ত।
উঠতি
বয়সের টান
ছিল না, তবু আলতো একটা
মন ছিল, ভাল লাগার একটা
মন।
চুমকি
বলত,
রমা তুই আজ
পড়ে আসিস নি বুঝি!
রমাকান্তর
মনে লাগত, তিনি বলে
উঠতেন,
কেন?
গালে হাসি ধরা থাকত চুমকির আমি দেখছিলাম, ক্লাসে তুই
ঝিমচ্ছিলি?
সত্যি
রমাকান্ত ঝিমচ্ছিলেন, তবু নিজের দুর্বলতা
ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করতে তিনি বলে উঠে ছিলেন, কই-না তো? একটা ছোট
মেয়ের কাছে
তাঁর দুর্বলতা
ধরা পড়া
সাজে না।
-দুপুরে খুব টো
টো করে
বেড়াস বুঝি?
-তোর এত পাকামির
কি আছে? তুই আমার গার্জিয়েন
নাকি?
-আমি
তোর সব
খবর রাখি, এমনটা বলে
চুমকি হাসত--রমাকে
রাগিয়ে ওই বয়সী মেয়েটা
যেন মজা
পেত!
সত্যি,
রমাকান্তর কিন্তু
সে সময়টায়
পড়া লেখায়
তেমন মন
ছিল না।
দুপুরে সুযোগ
পেলেই টোটো
কোম্পানি করে
বেড়াতেন।
সেদিন
রমাকান্ত দেখলেন, চুমকি ভর
দুপুরে একলাটি ওদের
বার
বারান্দায় দাঁড়িয়ে।
রমাকান্ত
বলে উঠলেন, এ সময় তুই এখানে
দাঁড়িয়ে কি
করছিস?
চুমকির মুখে দুষ্টুমির হাসি,
তোকে পাহারা দিচ্ছি--দেখি রোজ
দুপুরে তুই
কোথায় যাস!
-আমি যেখানেই
যাই তোর কি রে? রমাকান্ত কথাটা
বললেন বটে, খানিক পরে তাঁর
মনে হল, চুমকি তাঁর সঙ্গে আসলে, খারাপ কি?
ভাল
লাগা ছুঁয়ে
থাকার বয়েস
হতে পারে
এটা কিন্তু
এ
বয়সে ভাল লাগা ঘন হয়ে
উঠতে পারে
না। ওদের
মন তো
তখন ডাঁসা
হতে পারেনি।
তবু ছেলে
আর মেয়ের
শারীরিক আঁচ পরস্পরকে স্পর্শ
করতেই পারে ! রমাকান্ত সেদিন বলেই
বসলেন,
যাবি নাকি আমার সঙ্গে ?
-কোথায়?
-আমায় পাহারা দিতে?
-না রে, কথাটা বলে
তারপর চুমকি এদিক
ওদিক তাকিয়ে
বলল, না চল, যাবো
দুজনে
চলেছে। তাদের মাঝে প্রখর রোদের অনুভব
নেই, সতেজ একটা
ছন্দ ফুটে
উঠছিল
ওদের চলনে। সামনে
মল্লিকদের ইটখোলা। আশপাশে ঝোপঝাড়ের
জঙ্গল।
-এখানে কি করতে
এলি?
-খেলব বলে
-না, আমার ভয়
করছে
তবু
ওরা
রোদছায়া মেখে ঘুরছে।
-খুব ভাল লাগছে,
চুমকি বলে।
-এবার চল চুমকির
একটা হাত
ধরেন রমাকান্ত।
চুমকি
রমার গা
ছুঁয়ে আছে।
ওরা উচ্ছল, ওরা গাছের ছায়ায়, রোদের আবডালে,
ইটখোলার ধারে
ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ওদের মুখে
কথা নেই, সেদিনের পড়ন্ত দুপুর
এত ভাল
লাগছিল কেন
তা বোধহয়
ওরা নিজেরাও
জানে না! বয়সের
মাঝেই বয়সের
লুকিয়ে থাকা।
খেলাগুলি আস্তে
আস্তে খুলে
যাচ্ছিল। বারবার
ওরা একে
অন্যের দিকে
তাকাচ্ছিল। চুমকির
গায়ের লাল
রাঙা ফ্রক
হাওয়ায় উড়ছিল।
ওরা দেশ
কাল ভুলে
ছিল,
সেই অকাল বসন্ত বেলায়
ওরা হাত
ধরাধরি
করে দুলছিল। গায়ে গা
মাখাচ্ছিল। চুমকি ও রমাকান্ত কোথায়
যেন হারিয়ে
যাচ্ছিল, আবার জেগে
উঠছিল। মলয়জ
শীতল বাতাস
ওদের অনুভবের
রন্ধ্র দ্বার
না খুলতে
পারলেও স্তিমিত
জেগে ওঠা
মন সে দিন ওদের
দুজনকে আরও
আরও কাছে
টানতে চাইছিল।
No comments:
Post a Comment