জীবনের কথাকলি
গত সপ্তাহের দিনগুলো কেমন রঙিন বেলুনের
মত হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছিল সকাল থেকে সন্ধ্যে। রাতের আঁধারে তারা কোথায় মুখ লুকিয়েছিল সে
খোঁজ নিতে ইচ্ছে করেনি একবারও। ইচ্ছে করেনি কোন বইয়ের পাতার ভাঁজে মুখ গুঁজে দিতে।
ইচ্ছেরাও হয়ত দল বেঁধে উড়াল দিয়েছিল ওই রঙিন বেলুনগুলোর সাথে পাল্লা দিতে। তাই ঘরের
কোণে বসে ঘড়ির টিক-টক শুনতে শুনতেই ভারী হয়ে আসে নিঃশ্বাস। সামনে খুলে রাখা ল্যাপটপের
কীবোর্ডে একাকী আনমনে আঙুল ছুঁইয়ে বসে থাকার মধ্যে আলস্যটাই শতকরা আশি ভাগ। আর বাকীটা
মন কেমনের গোলকধাঁধায় ঘুরে মরা। কি লিখব, কেন লিখব, কার জন্যে লিখব...ভাবতে ভাবতেই
টেনে নিই কাগজ-কলম। মাঝে মাঝেই ফিরে যেতে ইচ্ছে করে ছোটবেলায়...খাতায়-কলমে...সাদায়-কালোয়।
কিন্তু ওই যে বলে না, ‘অনভ্যাসের ফোঁটায়
কপাল চড়চড় করে’। প্রযুক্তি এসে কেড়ে নিয়েছে ঝর্ণা কলম, শুষে নিয়েছে সুলেখা কালি...
দিয়েছে অনুভূতিহীন যান্ত্রিক যাপন। তবু আজ ইচ্ছে হল সাদা পাতার বুকে কিছু আঁকিবুঁকি
করার। কলম চলুক আপন খুশীতে। তার তো কাউকে জবাবদিহি করার দায় নেই!
সাদা পাতাটা বেশ কয়েক ঘন্টা একইভাবে পড়ে
আছে টেবিলের উপর। একবার আঙুল ছুঁয়ে তার ধুকপুকুনি অনুভব করার চেষ্টা করি। কেমন পরম
নিশ্চিন্তে ঘুমন্ত মানুষের মত পড়ে আছে শক্ত কাঠের বুকে। তার বুকে কলমের আঁচড় কাটার
ইচ্ছেও করছে না। ইচ্ছেগুলো কেমন যেন অবাধ্য হয়ে উঠছে! আসলে ওরাও বোধহয় পারিপার্শ্বিক
ঘটনাবলীর নিরন্তর লজ্জাহীনতায় মুখ লুকোতে চাইছে। মনের মধ্যে এত হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ
বয়ে নিয়ে মানুষ বাঁচে কি করে! ঘুমোয় কি করে! প্রেম করে কি করে! সন্তানের মাথায় স্নেহের
হাত রাখে কি করে! অজস্র প্রশ্নের ভীড়ে পায়ে পায়ে পিছিয়ে যেতে থাকি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে।
“অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে করে যাব আশীর্বাদ, তারপর হব ইতিহাস"।
ধীরে ধীরে নামিয়ে রাখি কলম।
শীতের রুক্ষতায় ঢাকা পড়ে যায়
শিরার উপর ব্লেডের আদুরে জলছবি,
মেহগিনির ডালে রিক্ততা নামে
নগ্ন দু’বাহু আকাশ ছুঁতে চায়।
No comments:
Post a Comment