সুখী মানুষ
তপ্ত রোদ। গরম খুব বেশি। এত গরমের মাঝেও কোট টাই পড়ে আছি। হাতে এক ফাইল ভর্তি
সার্টিফিকেট। আজো হতাশ। এ নিয়ে ২৬ টা ইন্টারভিউ
দিলাম। একটাতেও হয়নি। ফিজিক্সের ছাত্রদের চাকুরী বাজার
এদেশে অনেক সীমিত। তার উপর আমি কোন ভাল পাবলিক
ভার্সিটি তে ছিলাম না। বাড়ির বাইরে বেশি যেতে
পারিনি দারিদ্র্যের জন্য। তার মাশুল
এখন গুনছি প্রতিটা ইন্টারভিউ
শেষে।
ইন্টারভিউ ভাল হলেই
হয়না। থাকা লাগে
প্রভাব আর টাকার জোর। আমার তাও নেই। এই গরমে
চা খাওয়া থাক, রাস্তার ধারের
ওই বেলের শরবত খাওয়ার
টাকাও আমার কাছে নেই।
রাহাত না?
অনেক চেনা গলা। কে ডাকে? শরবতের
দাম দিয়ে তার কাছে
আসছে লিকলিকে রফিক। আহ! কি
মধুর বন্ধুত্ত্ব ছিল আমাদেরর। রফিক বরাবর ডিপার্টমেন্টে প্রথম। আর আমি ৪/৫ এর মাঝে।
-
কিরে! তুই এই ড্রেসে? তুই কি সত্যিই......
-
হ্যা। যা জানিস
তা সত্যি। আমি এখন সিএনজি
চালাই। চাকরি যে পাব না এই সাবজেক্টে
তা তো জানাই ছিল। তুই কি করছিস?কোন কোম্পানি?
একটা ভারী নিঃশ্বাস ফেলি। কোথাও না। কেবল
ইন্টারভিউ দিচ্ছি। রফিক
আমায় বেলের শরবত খাওয়াল। বাহ!
রফিক কত ভাল আছে! বন্ধুদের
খাওয়াতে পারছে। আমি তো নিজেই
পারিনা। দুমিনিট নিজের
মনে ভাবলাম। লজ্জা
নিয়ে বাঁচতে গিয়ে লজ্জার
মাঝে আরো ডুবছি। আর না।
-
আচ্ছা রফিক, তোর ডেইলি
আয় কত?
-
এই ধর ১৩০০ মত। ৮০০ টাকা গ্যারেজে দিই এর মাঝে।
-
দিন শেষ করে ৬০০। তাইতো?
-
মাস শেষ হলে ১৮০০০
এর মত।
-
ব্রেইন দেখি এখনো খুব ফাস্ট!
-
হু। ভাংতির হিসাব
করি তো! হাহাহা!
রফিক হাসছে। তার হাসার
অধিকার আছে। আমার
নেই। আমি বেকার। তাই হাসি আমার মানায়
না।
-
এই গাধা! কি ভাবিস? রফিক
খুব মজা করেই প্রশ্ন
করল।
-
ট্যাক্সি চালান শিখতে কতদিন
লাগে?
-
হু। বুঝলাম দোস্ত। তুই বাইক চালাতি না?তুই খুব দ্রুত
পারবি। এই ধর ২ সপ্তাহ। শিখবি?
-
হ্যা। আমার আর উপায়
নাই।
রফিক আমার ৩০০ টা টাকা
দিয়ে বলল বাসায় মিষ্টি
নিয়ে যাস। বলবি
সামনের মাস থেকে জব। এর মাঝে ট্যাক্সি চালানো
শিখে যাবি। কোট টাই পড়ে বের হবি। গ্যারেজে এসে এই বেগুনী
জামা পড়ে
ডিউটি করবি। বুঝলি?
রাস্তায় আমি এখন শিষ দিয়ে
হাটছি। হাতে এক কেজি
মিষ্টি। মাকে ফোনে
বলে দিয়েছি আমার চাকরি
হয়ে গেছে। বাবা
নাকি খুব কাঁদছে। কাঁদুক। আর কষ্ট করতে হবেনা
তাকে। এইই শেষ বার। ছোট বোনের অনেক আব্দারের
পুতুলটাও কিনেছি। আমি শিষ দিব নাতো
কে দিবে? আমি তো এখন সুখী
মানুষ।
No comments:
Post a Comment