বোকারাই প্রেমে পড়ে
লেখকঃ রিয়াজুল আলম শাওন
ক্যাটাগরীঃ সমকালীন উপন্যাস
প্রকাশকঃ খন্দকার মনিরুল ইসলাম, ভাষাচিত্র,
প্রথম প্রকাশঃ একুশে বইমেলা ২০১৬
প্রচ্ছদঃ আহসান হাবীব
মূল্যঃ ১৫০টাকা
একযুগেরও
বেশী বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখির দরুন এই তরুণ লেখক
বেশ সুপরিচিত বটে। মানুষ হিসাবেও অসাধারণ, আন্তরিক। পরিচয়ের অনেক আগেই তার “কেবিন নাম্বার ৩০৫” বইটিতে আমার
মুগ্ধতা। এর পরে কথা বলে, তারপরে সাক্ষাতে
মুগ্ধতা বেড়েছে উত্তরোত্তর। যা হোক, বইটা বাসায় নিয়ে এসেই পড়া শুরু করতে পারলাম
না। নানান ব্যস্ততায় এক বসায় বইটি পড়ে উঠবার সময় মিলছিলো না। তারপর একদিন বোশেখের
চরম গরমে দখিনা জানালা খুলে শুয়ে বইটা পড়া শুরু করলাম। আমার কাছে বই পড়া মানে
শুধুমাত্র বইয়ের ভেতরের মূল কাহিনী অনুধাবন নয়, ভেতর ও বাইরে পুরো বইটির সৌন্দর্য
অবলোকনেও আমার মন ব্যপৃত থাকে।
প্রথমে
কিছুক্ষণ প্রচ্ছদে চেয়ে থাকি। পেইন্টিং টা নিয়ে গবেষণা চলতে থাকে মনের ভেতরে। হাতে
আঁকা নাকি ইলাট্রেটরের কাজ? কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব অসাধারণ দক্ষতায় একটি বোকার
মূখাবয়ব এঁকেছেন। এক পাশে একটি নারীর প্রতিচ্ছবি। এক পাশে কিছু হৃদয় চিহ্ণ।
নীল-সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে প্রেম আবহের বেশ চমৎকার একটি প্রচ্ছদ এঁকেছেন প্রিয় কার্টুনিস্ট মশাই। লেখক
রিয়াজুল আলম শাওন, একদিন বইমেলায় গেলে বলছিলেন, ‘আরেকটু আগে আসলে কার্টুনিস্ট
স্যারের সাথে পরিচিতি করিয়ে দিতে পারতাম!’
এর পরে
বইটির ফ্ল্যাপের কথায় চোখ বুলোলাম। মূল কাহিনীর সারমর্ম আঁকবার অথবা পাঠককে বইটি
সম্পর্কে চিন্তায় আচ্ছন্ন করবার প্রয়াস রাখা হয়েছে সেখানে।
উৎসর্গে এসে আবেগাপ্লুত হোলাম। লেখকগণ উৎসর্গে এসে কি পাঠকদের ইচ্ছে করে আবেগাপ্লুত করে দেয়? প্রায়ই আমি বইয়ের উৎসর্গে এসে বইটির প্রতি ভালোবাসায় নিমজ্জিত হই। এর পরের পাতায়
আবার ভূমিকা। সেখানেও মুগ্ধতা। কার্টুনিস্ট মশাই নিজে লেখকের হয়ে লিখেছেন। বাহ!
বেশ লাগলো ব্যাপারটা এবং কথাগুলোও। এর পরের পাতায় লেখক রিয়াজুল আলম শাওন এর নিজস্ব
বক্তব্য খানিকটা। তার কথাগুলোর দ্বিতীয় প্যারা পড়ে দ্বন্দ্বমুখোরতায় জড়িয়ে মূল
গল্প পড়া শুরু করলাম। শুরু হলো লেখকের মায়ের সাথে টক ঝাল খুনসুটি দিয়ে গল্পটা।
একটু এগোতেই মাথায় ঢুকলো লেখক নয়, উত্তম পুরুষে লেখা গল্পের নায়কের পারিবারিক আবহ
বর্ণনা চলছে। পড়ে চলেছি। সাধারণ হাস্যরসাত্মক পারিবারিক খুনসুটি ভালোই লাগছিলো।
পরের পরিচ্ছদে আসতেই মনে হলো, গল্পের নায়ক একটু সহজ সরল, কাউকে ‘না’ বলতে পারেন না বোধহয়। এই পর্বের ভালোলাগাটা
আমাকে কখন একের পরে এক পৃষ্ঠা উলটে পরের পর্বে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আমি টেরই পাচ্ছি
না। মুগ্ধতায় পড়ে যাচ্ছি কেবল। সাবলিল বর্ণনায় কাহিনীর চড়াই উৎরাই বেশ উপভোগ্যই লাগছে। এর
পরে কী হবে? তারপরে কী হবে এই ভাবনায় ডুবে গেছি একটা সময়। কিন্তু পাতা উলটে
ফিনিশিং দেখতে ইচ্ছে করছেনা। কেননা, রম্য গল্পের প্রতিটি লাইন, প্রতিটি ঘটনার
রসাস্বাদন করতে না পারলে শুধু ফিনিশিং দেখে পুরো কাহিনীর স্বাদ আস্বাদন ব্যহত হবে।
রহস্য রোমাঞ্চ গল্পের মত টান টান উত্তেজনায় এই প্রথম কোন রম্য উপন্যাস পাঠ করলাম।
একেবারে শেষ করে মনে হলো শেষ হয়েও যেন হলো না শেষ, রয়ে গেছে এর অপূর্ব রেশ। একটা
উপন্যাস তো পড়িনি যেন একটি হাসির টেলিফিল্ম দেখছিলাম এতক্ষণ। বইটা শেষ করার পরে কাহিনী শুরুরও আগে লেখক রিয়াজুল আলম শাওন এর সেই কথাগুলো
মনে পড়লো, “বোকারাই প্রেমে পড়ে’ উপন্যাসটি পড়ে কারো ঠোঁটের কোণে যদি এক চিলতে হাসি
ফোঁটে, তবেই আমার পরিশ্রম সার্থক।“ এই মুহুর্তে লেখক সামনে থাকলে দেখতে পেতেন তার
বইয়ের পাঠকের মুখের হাসি। শুধু এক চিলতে হাসি নয়, মাঝেমাঝে হো হো উচ্চস্বরের হাসিও
মিলতো বৈকি।
উপন্যাসে
একজন সরল তরুণ কে ঘিরে আরও কয়েকটি চরিত্রের ব্যঞ্জনায় টক-মিষ্টি বিভিন্ন ঘটনার
আবর্তে জীবন বাস্তবতা ও শিক্ষণীয় অনেক দিক উঠে এসেছে বলেই হয়তো বা প্রেমের গল্প
হলেও বইটির প্রতি মানুষের আগ্রহ এরকম উপচে পড়েছে।
বয়সে তরুণ এই
লেখকের জন্য জানাই শুভকামনা। আমাদের জন্য আরও অনেক ভালো বই লিখুন এই রইলো শুভাশিস।
No comments:
Post a Comment